বিচারপতি শামসুদ্দিনকে বিদায় জানালেন আ. লীগ সমর্থক আইনজীবীরা

বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবসে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে তার কক্ষে গিয়ে বিদায় সম্ভাষণ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2015, 07:48 PM
Updated : 18 Sept 2015, 05:23 AM

আগামী ১ অক্টোবর অবসরে যাচ্ছেন সর্বোচ্চ আদালতের এই বিচারক। তার আগে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অভিশংসন চেয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি।

সাপ্তাহিক ছুটি ও সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক অবকাশ শুক্রবার শুরু হচ্ছে। অবকাশ শেষে ১ নভেম্বর নিয়মিত আদালত বসবে। সেই হিসেবে বৃহস্পতিবার ছিল বিচারপতি শামসুদ্দিনের শেষ কর্মদিবস।  

প্রথা অনুসারে উচ্চ আদালতের কোনো বিচারকের দায়িত্ব গ্রহণ ও অবসরের আগে তাকে বেঞ্চে (এজলাস) সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তা দেয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যার্টনি জেনারেল।

তবে শেষ সময়ে কোনো বেঞ্চে ছিলেন না বিচারপতি শামসুদ্দিন। প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির বরাবরে পাঠানো চিঠিতে তিনি দাবি করেন, ৮ সেপ্টেম্বর থেকে তাকে বিচারিক কার্যক্রম থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে।

সংবর্ধনার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু তিনি বেঞ্চে আসীন হননি, তাই বিদায় সংবর্ধনা জানানো সম্ভব হয়নি।”

আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা না হলেও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে তার কক্ষে গিয়ে দেখা করে বিদায়ী সম্ভাষণ জানান ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, আবদুল বাসেত মজুমদার, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, পরিমল চন্দ্র গুহ, শ ম রেজাউল করিম, লায়েকুজ্জামান মোল্লা, মনজিল মোরসেদ ও ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর প্রমুখ।

শ ম রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু আজ  তিনি কোনো এজলাসে ছিলেন না, সে কারণে আমরা তার চেম্বারে গিয়েই বিদায় জানিয়েছি।”

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ১৯৭৮ সালে হাই কোর্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষে দায়িত্ব পালন করেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায়। ইয়াসমিন হত্যা মামলায়ও ছিলেন তিনি।

২০০১ সালের ৩ জুলাই হাই কোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পান এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী; সে সময় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়।

অস্থায়ী নিয়োগের দুই বছর মেয়াদ শেষে বিএনপি সরকার তাকে স্থায়ী না করে বাদ দেয়। এ নিয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন হয়। 

২০০৯ সালের ২ মার্চ সর্বোচ্চ আদালত শামসুদ্দিন চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন বিচারকের পক্ষে রায় দেয়।

এরপর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময়ে ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাই কোর্টে স্থায়ী নিয়োগ পান বিচারপতি শামসুদ্দিন। তাকে আপিল বিভাগে নেওয়া হয় ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ।

কটূ মন্তব্যের কারণে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর অপসারণ চেয়ে ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছিলেন এক আইনজীবী। আদালতে স্পিকারকে নিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিনের এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কয়েকজন সংসদ সদস্যও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছিলেন।

সে সময় স্পিকারের দায়িত্বে ছিলেন মো. আবদুল হামিদ, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। সংসদে রুলিং দিয়ে তিনি বিষয়টি নিষ্পত্তির দায়িত্ব প্রধান বিচারপতির হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন সে সময়।

মুন্সীগঞ্জের সন্তান শামসুদ্দিন চৌধুরী যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিবাসন এবং উদ্বাস্তু আইনে পোস্ট গ্রাজুয়েট রিসার্চ স্টুডেন্টসদের এক্সটার্নাল সুপারভাইজার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবিধানিক, ফৌজদারি এবং চুক্তি আইন বিষয়ক প্রভাষক হিসাবেও কর্মরত ছিলেন।

বাংলাদেশ হাই কোর্টের বিচারক থাকাকালে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী, কর্নেল তাহেরের গোপন বিচার, বিজিএমইএ ভবন সংক্রান্ত মামলাসহ বহু আলোচিত রায় তার হাত দিয়ে আসে।