নিরাপত্তা পরিষদের প্রার্থিতায় নাইজেরিয়ার ভোট চাইল বাংলাদেশ

উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2023, 11:55 AM
Updated : 14 Jan 2023, 11:55 AM

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২০২৬ সালের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে প্রার্থিতায় নাইজেরিয়ার ভোট চেয়েছে বাংলাদেশ; প্রতিউত্তরে তা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন সফররত দেশটির এক মন্ত্রী।

শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে নাইজেরিয়ার কমিউনিকেশান্স অ্যান্ড ডিজিটাল ইকোনমি মন্ত্রী ইসা আলী ইব্রাহিম পান্তামির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন দুই মন্ত্রী।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “আন্তর্জাতিক পরিসরে বিভিন্ন সময়ে তারা আমাদেরকে সমর্থন দেয়। আমরা অনুরোধ করেছি, ২০২৬ সালে জাতিসংঘে আমাদের মেম্বারশিপের ব্যাপার রয়েছে, সেটাতে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। তারা বলেছে- কনসিডার করবে।”

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে নাইজেরীয় মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের অনুরোধের বিষয়ে আমরা বিবেচনা করব। আমাদেরও দুয়েক জায়গায় ভোট রয়েছে।

“আমরা সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকি, বাংলাদেশও নাইজেরিয়ার পাশে থাকে। এটা এমন অবস্থা, যেখানে আমরা সবসময় একে অপরকে নিশ্চিতভাবে ধরে নিতে পারি।”

পাঁচ স্থায়ী সদস্য ও ১০ অস্থায়ী সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হয় জাতিসংঘের শীর্ষ পর্যায়ের অঙ্গ নিরাপত্তা পরিষদ। অস্থায়ী সদস্য হিসাবে প্রতিবছর ৫টি করে সদস্য দেশ নির্বাচন করা হয়, আর তাদের মেয়াদ হয়ে থাকে দুই বছর।

অস্থায়ী ১০ সদস্যের মধ্যে পাঁচটি পদ আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশের জন্য নির্ধারিত; এর বাইরে পূর্ব ইউরোপের জন্য একটি এবং দুটি করে নির্ধারিত লাতিন আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের জন্য।

২০২৩ সালের অস্থায়ী সদস্য হিসাবে রয়েছে আলবেনিয়া, ব্রাজিল, ইকুয়েডর, গ্যাবন, ঘানা, জাপান, মাল্টা, মোজাম্বিক, সুইজারল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

তিন বছর পরে এশীয় দেশগুলোর প্রতিনিধি হয়ে নিরাপত্তা পরিষদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে দুইবার অস্থায়ী সদস্য ছিল বাংলাদেশ।

নিরাপত্তা পরিষদে ভোটের আলোচনার বাইরে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানান দুই মন্ত্রী।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “বিভিন্ন বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। যেমন দুদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তোলা, একটা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা যায় কি না দেখা, আমাদের বিনিয়োগকারীরা সে দেশে বিনিয়োগ করতে পারে কি না সেটা দেখা।

“ওদের বিপুল পরিমাণ জমি আছে, সেখানে কৃষিখাতে আমরা বিনিয়োগ করতে পারি। ওরা তো তেলসমৃদ্ধ দেশ, সেদিক থেকে কথা হয়েছে।”

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্টাডি করার ইচ্ছার কথা নাইজেরিয়া জানিয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে টিপু মুনশি বলেন, “ওদের কাছ থেকে মূলত তেল-গ্যাস আনি; মোট মিলে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের আমদানি আমরা করি। আমাদের দিক থেকে কিছু যায়। ওখান থেকে খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে মশলাটশলা কিছু আসে। এই এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ভলিউমটাকে কীভাবে বাড়ানো যায়।

“আমাদের থেকেও বেশি জনসংখ্যা ওদের। অর্থনৈতিকভাবেও তারা ভালো আছে, সে কারণে রপ্তানির জন্য ভালো গন্তব্য হতে পারে আমাদের জন্য। তৈরি পোশাক বা অন্য কিছু হতে পারে।”

নাইজেরিয়ার মন্ত্রী ইসা আলী ইব্রাহিম বলেন, “বিপুল জনসংখ্যার দেশ নাইজেরিয়া এবং এটা আফ্রিকা মহাদেশের অনেকটা কেন্দ্রে অবস্থান করছে। ফলে এখানে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অনেক বেশি। আবার ব্যবসায় ও বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।

“আমি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানাব, নাইজেরিয়ায় বিনিয়োগের যে সম্ভাবনা আছে, সেটাকে খতিয়ে দেখার জন্য।”

ব্যবসায়ের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য অনেক নীতিমালা সহজ করা হয়েছে বলেও ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি।