হল-মার্ক কেলেঙ্কারি: তানভীর ও জেসমিনের যাবজ্জীবন

এক যুগ আগে সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের ঘটনায় হল-মার্ক গ্রুপের মালিক, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা হয়; এ মামলা তারই একটি।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2024, 07:25 AM
Updated : 19 March 2024, 07:25 AM

অস্তিত্বহীন কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তানভীর মাহমুদ এবং তার স্ত্রী ও কোম্পানির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ নয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

এক যুগ আগে দুদকের দায়ের করা এ মামলার বাকি আট আসামিকে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড।

ঢাকার প্রথম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আবুল কাশেম মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের ঘটনায় ২০১২ সালে হল-মার্ক গ্রুপের মালিক, কর্মকর্তা এবং সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়। এ মামলা তারই একটি।

২৪৮ পৃষ্ঠার রায়ের পর্যবেক্ষেণে বিচারক বলেন, “মামলাটির ঘটনা ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ঘটনা। যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলো মনে করে, তাদের মৃত্যুদণ্ডের মত সাজা হওয়া উচিত মর্মে আদালত মনে করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন। এমতাবস্থায় অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হল।”

রায়ে তানভীর ও জেসমিনকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ৪২০ ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাদের।

তানভীরের ভায়রা হল-মার্কের জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহমেদ, সেনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক এবং টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসানকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর ৪২০ ও ১০৯ ধারায় তাদের সাত বছর করে কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত।

বাকি আসামিদের মধ্যে সেনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ডিএমডি মাইনুল হক, ডিজিএম মো. সফিজউদ্দিন আহমেদ, সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার বর্তমান জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি, সেনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জিএম মীর মহিদুর রহমান, এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান, জিএম ননী গোপাল নাথ ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর ৪২০ ও ১০৯ ধারায় তাদের সাত বছর করে কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এছাড়া সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকারকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৪২০ ও ১০৯ ধারায় তাকে দেওয়া হয়েছে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড।

আসামিদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম, মতিন, হুমায়ুন, ননী গোপাল, তসলিম, সাইফুল হাসান, মেরি ও জাকারিয়া পলাতক। জামাল উদ্দিন ও আলতাফ ছিলেন জামিনে। তানভীর, জেসমিন, তুষারসহ বাকি আটজন কারাগারে ছিলেন।

অস্তিত্বহীন ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের নামে প্রায় ৫২৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা করে দুদক।

তদন্ত শেষে দুদক অভিযোগপত্র দিলে ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ বদলির আদেশ দেন মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা।

রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১২ মার্চ আলোচিত এ মামলা রায়ের জন্য ১৯ মার্চ দিন রাখে আদালত।

দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ সালাম জানান, এর আগে ৫ ও ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে হল-মার্ক কেলেঙ্কারির কয়েকটি মামলার রায় হয়েছে, তবে সেসব মামলায় তানভীর মাহমুদ বা জেসমিন ইসলাম আসামি ছিলেন না।