শ্রম আইন সংশোধনে তাড়াহুড়ো না করতে বলেছে আইএলও: আনিসুল হক

গত নভেম্বরে বিল পাস হলেও তা ফেরত দেন রাষ্ট্রপতি। বিলটি তামাদি হয়ে যাওয়ায় সেটিকে এখন নতুন করে সংসদে তুলতে হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2024, 05:52 PM
Updated : 6 Feb 2024, 05:52 PM

বাংলাদেশের শ্রম আইন সংশোধনের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলওর তরফে তাড়াহুড়ো না করার পরামর্শ এসেছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইএলও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করার পর তিনি এ কথা জানান।

আইন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়েই এদিন বৈঠক হয়।

“এর আগে যখন বসেছিলাম, তখন যেসব সংশোধনীর কথা বলা হয়েছিল, সেখানে আরও কিছু নতুন সংশোধনী আনার ব্যাপারে শ্রম মন্ত্রণালয় আমাকে জানিয়েছিল। তাছাড়া এ বিষয়ে আইএলও-ও কিছু বক্তব্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল,” বলেন আনিসুল হক।

জেনিভা থেকে আইএলও’র চারজনের একটি দল বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “বৈঠকে শ্রম আইনের প্রায় প্রত্যেকটা ধারা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা চাচ্ছিলাম, শ্রম আইনটা পার্লামেন্টের চলতি অধিবেশনে পাস করার জন্য।

“কিন্তু আইএলও প্রতিনিধি দল বলেছেন, তারাহুড়ো না করে আলোচনা করে আরও কিছু করতে পারলে ভালো হবে।”

আনিসুল হক বলেন, “আমি তাদের স্পষ্টভাবে বলেছি যে, আইএলও-তে আমাদের বিরুদ্ধে গত তিন বছর ধরে একটা অভিযোগ ঝুলে আছে। প্রত্যেক মার্চ মাসেই বলা হয়, এটার বিষয়ে মার্চ মাসে সিদ্ধান্ত হবে না, নভেম্বরে হবে। আবার নভেম্বরে বলা হয় এবার হবে না, মার্চে হবে। আমি সেজন্য স্পষ্টভাবে বলেছি যে, আগামী মার্চ মাসের গভর্নিং বডির মিটিংয়ে যদি বলেন, এটা আবার নভেম্বরে যাবে, সেটা আমরা মেনে নিতে রাজি না।

Also Read: ‘মুদ্রণজনিত ভুলে’ ফেরত আসে শ্রমআইন: আইনমন্ত্রী

Also Read: বিভ্রান্তির শঙ্কায় শ্রম বিল ফেরত পাঠালেন রাষ্ট্রপতি

“তখন তারা বলেছেন, কমপ্রিহেন্সিভ লেবার অ্যাক্ট (সমন্বিত শ্রম আইন) তাদের পরামর্শ মিলিয়ে যদি করতে পারি, তাহলে সেটা এই মার্চ মাসে আমাদের অভিযোগ নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা হবে না, বরং আমরা যে আলোচনাগুলো করছি, সেটার একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “এই আইনের কিছু কিছু বিষয় আছে, তা নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সাথেও আলাপ করতে হবে। তাই আমরা দুটি সিদ্ধান্তে এসেছি। একটা হচ্ছে এই মিটিং আবারও অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে আইএলও-এর উদ্যোগে একটা স্টেকহোল্ডার ফ্যাসেলিটি মিটিং হবে। সেখানে যেসব ইস্যু নিয়ে আমাদের সাথে তাদের মত পার্থক্য আছে, সেগুলো আলোচনা হবে।”

বৈঠকে আইএলও কী পরামর্শ দিয়েছে, এ প্রশ্নের উত্তরে আনিসুল হক বলেন, “তারা বলছেন, ‘সি ম্যান' এর নাম বদলিয়ে সি ফেয়ারার নাম করা। ম্যানেজার ও সুপারভাইজারদের ওয়ার্কার বলা।

“একটা কথা আসছিল, ইউনিভার্সিটি টিচারদের ওয়ার্কার বলতে হবে, আমি সেটা নাকচ করে দিয়েছি। আমি বলেছি, ইউনিভার্সিটি টিচারদের আমরা ওয়ার্কার বলতে পারব না। তার কারণ হচ্ছে, ইউনিভার্সিটি টিচাররাও চান না যে, তাদের ওয়ার্কার বলতে এবং ওয়ার্কারের সংজ্ঞায় আনতে, আমরাও চাই না।”

গত ২৯ অক্টোবর একাদশ সংসদের শেষ অধিবেশনে বাংলাদেশ শ্রম আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় সংশোধন এনে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল, ২০২৩’ উত্থাপন করা হয়। পরে মাত্র তিন দিনের সময় দিয়ে সংসদে রিপোর্ট উপস্থাপনের জন্য বিলটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠনো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ২ নভেম্বর বিলটি সংসদে পাস হয়।

বিলটি পাসের পর আইনে পরিণত করার বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে ৮ নভেম্বর তা রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু সম্মতি না দিয়ে সংবিধানের ৮০ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী ২০ নভেম্বর তা সংসদে ফেরত দেন রাষ্ট্রপতি। বিলটি তামাদি হয়ে যাওয়ায় সেটিকে এখন নতুন করে সংসদে তুলতে হবে।

২০০৬ সালের শ্রম আইনে দুটি উপধারায় বেআইনি শ্রমিক ধর্মঘট এবং মালিকপক্ষের বেআইনি লকআউটের ক্ষেত্রে যে শাস্তি ছিল, তার কিছুটা সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়। ওই আইনে কোনো শ্রমিক কোনো বেআইনি ধর্মঘট করলে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড, অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। কোনো মালিকও কোনো বেআইনি লকআউট করলে ঠিক একই শাস্তির মুখোমুখি হবেন বলে আইনি বিধান করা হয়।

তবে নভেম্বরে যে সংশোধনী প্রস্তাব সংসদে পাস হয়, সেখানে শ্রমিকদের বেআইনি ধর্মঘটের ক্ষেত্রে জরিমানা ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়। কিন্তু মালিকদের ক্ষেত্রে জরিমানা আগের মতই ৫ হাজার টাকা রাখা হয়।

সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিলটি ফেরত পাঠান রাষ্ট্রপ্রধান।

গত ২ নভেম্বর পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছিল, কোনো প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মোট সংখ্যা তিন হাজার পর্যন্ত হলে সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন করতে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগবে। আর মোট শ্রমিকের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি হলে শতকরা ১৫ ভাগের সম্মতি লাগবে।

এ বিষয়ে মঙ্গলবারের বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

“আগে ছিল ১৫ শতাংশ হবে শুধু তিন হাজার বা তার ঊর্ধ্বে যেসব কারখানা শ্রমিক আছে তাদের। এখন আমরা সেটাও তুলে দিচ্ছি। সকল শ্রমিকদের ব্যাপারে ১৫ শতাংশ কাজ করবে।"

বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এহছানে এলাহী, আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম সারওয়ার, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশে আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর তুওমো পাউটিয়াইনেন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার নীরন রামজুথান, টেকনিক্যাল অফিসার চয়নিচ থামপারিপাত্র, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মো. সাইদুল ইসলাম, প্রোগ্রাম অফিসার চৌধুরী আলবাব কাদির অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।