লুই অরাগঁ কবিতা: আয়নায় মুখোমুখি এলসা

সনৎকুমার সাহাসনৎকুমার সাহা
Published : 17 July 2022, 04:46 PM
Updated : 17 July 2022, 04:46 PM


আলোকচিত্র: কবি লুইস আরাগঁ ও তার স্ত্রী এলসা

পল এলুআর-এর মত লুই অরাগঁ (জন্ম ১৮৯৭) ও দখলদার নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে ফরাসি জনগণের মনোবল চাঙা রাখতে কবিতাকে হাতিয়ার করেন। তিনি ছিলেন উচ্চকন্ঠ প্রথাবিরোধী বামপন্থী পরাবাস্তবতায় চেতনার স্বতঃস্ফূর্ত মিশ্রণের শৈল্পিক কাব্যকলার অনুসারী। তাদের নির্যাস তাঁর প্রতিরোধের কবিতাতেও ফোঁটে। তবে কবিতার বক্তব্য কোন অসংগতিকে প্রশ্রয় দেয় না। এই কবিতায় এলসা সরাসরি ফ্রান্স-এর অন্তরাত্মার প্রতীক। তাতে সাম্য, ঐক্য, মুক্তি ও সহমর্মিতার প্রতিফলন। তারপরেও কবিতার স্পর্শকাতরতা পুরোপুরি বর্তমান।

অনুরূপ অভিজ্ঞতা অসাধারণ কবিতার জন্ম দেয় আমাদের দেশেও। শামসুর রাহমানের বন্দিশিবির থেকে একই অনুভবের প্রতিধ্বনি তোলে। এই আবেগের সমান্তরালে, উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ। তবে দুজনের কাব্যভাষা এক রকম নয়, যদিও দুজনই আমাদের স্বপ্নের রূপকার।

আয়নায় মুখোমুখি এলসা

এখন দুর্বৃত্ত কাল ঠিক মধ্যযামে
বিরস দীর্ঘদিন আমি যেন দেখি
সে বাঁধে সোনালী চুল আয়না সমুখে
যেন ধীরে সামলায় আগুনের গোলা
তখন দুর্বৃত্ত কাল ঠিক মধ্যযামে।

আর ওই দীর্ঘ দিন আয়না সম্মুখে
সে বাঁধে সোনালী চুল অগোছাল হাতে
তখন দুর্বৃত্ত কাল বলতে পারি ঠিক মধ্যযামে
আর সেতারে সে তোলেসুর যেন অন্যমনে
ওই দীর্ঘ সারা দিন আপন আয়নায়।

সে বাঁধে সোনালী চুল নিশ্চিত জানি
স্বেচ্ছায় সে খুঁড়ে তোলে স্মৃতির বেদনা
ওই দীর্ঘ সারাদিন আয়না সম্মুখে
উদ্দাম স্বর্ণশিখা সব উসকে দিয়ে
কিছুই সে বলেনা অন্যেরা যা বলে।

স্বেচ্ছায় সে খুঁড়ে তোলে স্মৃতির বেদনা
তখন দুর্বৃত্ত কাল ঠিক মধ্যযামে
পৃথিবীটা যেন এক বিচূর্ণ দর্পণ
চিরুনিতে ফালা ফালা রেশমি আগুন
শিখা তার জ্বেলে দেয় আমার স্বরণ।

তখন দুর্বৃত্ত কাল ঠিক মধ্যযামে
যেন সপ্তাহে মাঝখানে বৃহস্পতিবার।
স্মৃতির সঞ্চয় নিয়ে ওই দীর্ঘদিনে
আনমনে দেখে তার আয়নার পটে।
অস্তিম শয়ানে যত বীর সন্তান
যদিও তারাই সেরা এ পোড়া জগতে
তাদের সবার নাম তোমাদের জানা
আরো জানা ওই সন্ধ্যা শিখার বারতা।
এবং সে স্বর্ণকেশী নীরব সজ্জায়
সামলায় খোপা তার আগুনের গোলা
এটাও তোমরা জান আমি না বললেও।