আপনাকে ছাড়ছি না

স্বাগতা দাশগুপ্তস্বাগতা দাশগুপ্ত
Published : 26 Jan 2023, 04:44 PM
Updated : 26 Jan 2023, 04:44 PM

আপনাকে ছাড়ছি না, ব্যাকরণবিদ!

দশম কি একাদশ শতক

যেখানেই বিরাজ করুন—

অভিনবগুপ্ত কিংবা রাজশেখরের সাথে

আপনার বন্ধুতা

থাক বা না থাক—

অবন্তীসুন্দরীর প্রেমপ্রার্থী হয়ে

গুর্জর প্রতিহারদের যুগে যতই বিচরণ করুন—

ইতিহাসের যে-পাতায়ই মুখ লুকোন—

হলদে অথবা পোকায় খাওয়া লাল…

কিঞ্চিৎ ইতিহাস আমারও তো জানা!

বাকি যা যা জেনে নেব

পাঠ করে নবগ্রন্থ

গুপ্তবাহিনী নিয়ে চিরুণিতল্লাশি করে

খুঁজে বের করবই

আপনাকে ছাড়ছি না, পুরাকালের বক্রোক্তিবিদ!

বক্রোক্তি দিয়ে আমার হৃদয়

খন্ডানো যাবে না

আমার কাব্য আমি ভেঙেচুরে ফেলেছি কবেই

তখন জাহ্নবীতীরে হয়তো-বা আপনার শয্যায়

ছিল না আমার কোনো রজঃচিহ্ন আঁকা

বাক্যের তীক্ষ্ণ অভিজ্ঞান

হলই বা আমার অজানা

পড়িনি কোনো তালপত্র-পুঁথি

তা-বলে লক্ষ্যভেদে নিতান্ত অপটু নই, বলুন?

শতক-সহস্রাব্দ ছানবিন করে

আপনাকে পেয়েছি

এ-যুগের মেট্রোস্টেশনে

জাহ্নবী আজও দূরে নয়…

প্রসন্নচিত্তে যেটুকু দেবেন

আঁজলা ভরে নেব

উপচে পড়বে অভাগিনীর সংসার—

এমন ভাববেন না মোটেও।

আমি লোভী মেয়েলোক

নরমুণ্ডে পান করি যৌবনের গরল-অমৃত

শিকারের সন্ধানে ওঁত পেতে থাকি

মুখে নিই অশ্বগন্ধী মূল

আমার লোলুপ দৃষ্টিতে সন্দেহ আছে কোনো?

চরাচর নির্ঘুম—

আমার কামনা এই ভূখণ্ডের মতোই পুরোনো

কাবেরী নদীর দেশে

হুরিপরি কম নেই, জানি

তাঞ্জোরের বাতায়নে

আপনাকে মানাবেও বেশ

নগরবালিকার সৌষ্ঠবে

ডুবে গেছে আপনার মন?

হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেব

গান্ধার-অবন্তী-কুরু-অঙ্গ-মল্ল-মগধ-কম্বোজ

যেখানেই যান—

ইতিহাস থেকে তুলে এনে

আপনাকে হত্যা করব

আমার প্রেম আর আমার আতপ্ত চিতায়

জাহ্নবী দূষণময়ী

আলিনগরের ধোঁয়া যথেষ্টই বিষাক্ত এখন

পথেঘাটে যানজট

হর্নের কর্ণভেদী স্বর

তাও যতটুকু হেঁটে যাওয়া

যতবার চোখে চোখ

যতটুকু নিরিবিলি

ওষ্ঠ আর অধরের যতবার সম্ভাব্য মিলন

কংক্রিটের ঘেরাটোপে  

নিভৃতির দাবী নিয়ে

সময় গুনছে প্রহর—

তোমাকে ছাড়ছি না, এ-যুগের ইতিহাসবিদ!

ছাড়ব না, ছাড়িনি আগেও…