‘নিজেদের মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিতাপ নেই’

বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের পাল্টা হিসাবে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চীন, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটিতে মানবাধিকার লংঘনের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে সমালোচনা করা হয়েছে। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2015, 09:39 PM
Updated : 28 June 2015, 11:55 AM

গত শুক্রবার বিভিন্ন দেশে ২০১৪ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র।

পরদিনই চীন ‘যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১৪’ নামে পাল্টা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলে সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।  

চীনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললেও নিজেদের খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে তাদের কোনো অনুতাপ নেই, এমনকি তাদের ভয়ংকর মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি করার কোনো আগ্রহও দেখা যায়নি।

এতে বলা হয়, “মানবাধিকারের স্বঘোষিত রক্ষক যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা না গেলেও সেখানে নতুন অনেক ঘটনার খবর পাওয়া যায়।”

“তাদের মানবাধিকার পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হলেও, তারা অন্যান্য দেশে মানবাধিকারের নির্লজ্জ লংঘন ঘটাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ক্ষেত্রে তাদের অনেকবারই ‘লাল কার্ড’ দেখানো হয়েছে।”

আগ্নেয়াস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার, একের পর এক সহিংস অপরাধ যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে বলেও চীনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগের ফলে অনেক প্রাণহানি এবং জনরোষের ঘটনা ঘটছে বলেও এতে দাবি করা হয়েছে।

উদাহরণ হিসাবে সাম্প্রতিক সময়ে মিসৌরির ফার্গুসন শহরে ড্যারেন উইলসন নামে একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে মাইকেল ব্রাউন নামে ১৮ বছর বয়সী নিরস্ত্র এক কিশোরের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে ‘নির্মম’ কৌশল অবলম্বন করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

“যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) নির্বিচারে নিষ্ঠুর নির্যাতনের পথ অবলম্বন করে।”

সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আটকের পর নিষ্ঠুর নির্যাতনের মাধ্যমে তথ্য আদায়ের অভিযোগ রয়েছে সিআইএর বিরুদ্ধে।

টুইন টাওয়ার হামলার পর জঙ্গি সন্দেহে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে কিছু ‘ঘৃণ্য পদ্ধতি’ ব্যবহার করা হলেও তার মাধ্যমে সিআইএ কর্মীরা ‘সঠিক কিছু তথ্য’ বের করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে গতবছর দাবি করেন গোয়েন্দা সংস্থাটির পরিচালক জন ব্রেনান।

গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট গোয়েন্দা কমিটির প্রতিবেদনে বন্দিদের জেরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী এই গোয়েন্দা সংস্থার ‘নিষ্ঠুর’ পন্থা ব্যবহারের তথ্য উঠে আসে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অবিরাম পানিতে চুবিয়ে নির্যাতন করা ছাড়াও যৌন নির্যাতনের হুমকি দিয়ে, পায়ুপথে পানি ঢুকিয়ে, চড় মেরে, ঠান্ডার মধ্যে রেখে, হেনস্থা করে এমনকি দিনের পর দিন ঘুমাতে না দিয়ে বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ ও বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মারাত্মক বর্ণবৈষম্য বিদ্যমান বলেও দাবি করা হয়েছে চীনের প্রতিবেদনে।

যুক্তরাষ্ট্রে নারী ও শিশু অধিকারও পুরোপুরি সুরক্ষিত নয় দাবি করে এতে বলা হয়, দেশটিতে নারীরা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হওয়ার পাশাপাশি ঘরেও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর পুরুষের নির্যাতনের শিকার হয় ২১ লাখ নারী। প্রতিদিন গড়ে তিনজন নারী তার পুরুষ সঙ্গীর হাতে খুন হন এবং নিপীড়নের শিকার হয়ে মারা যান চারজন নারী।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক লাখ শিশু গৃহহীন বলে উল্লখ করা হয় এতে।