দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বয়ে যাওয়া শতাধিক বছরের রেকর্ড ভঙ্গকারী শৈত্য প্রবাহে নিউ ইয়র্ক সিটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।
Published : 02 Mar 2015, 12:22 PM
রোববার শৈত্য প্রবাহের ৬৯তম দিন পার হওয়ার পরও সহসা আবহাওয়া পরিবর্তনের কোনো পূর্বাভাস নেই।
জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসের পর মার্চের প্রথম দিনটিও তুষারপাতের মধ্যেই কাটলো নিউ ইয়র্ক, নিউজার্সী, পেনসিলভেনিয়া, কানেকটিকাট, ম্যাসেচুসেটস, রোড আইল্যান্ড, মেইন, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, ইলিনয় রাজ্যের অধিবাসীদের।
শৈত্য প্রবাহের টান ধকলের ফলে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তীব্র শীতের কারণে লোকজন তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসছেন অথবা বাসায়ই অবস্থান করছেন। এতে ট্যাক্সি চালক, ছোটখাটো মুদির দোকানি, হোটেল-রেস্তরা, রাস্তার পাশের খাবার দোকান ইত্যাদি সেক্টরের লোকজনের আয় নিদারুনভাবে কমে গেছে।
আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ অস্বাভাবিক এ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন ।
জাতীয় আবহাওয়া দফতরের আবহাওয়াবিদ পিটার উইচোরস্কি জানিয়েছেন, ১৯৩৪ সালের পর গত ফেব্রুয়ারি মাসটি নিউ ইয়র্ক সিটি’র সবচেয়ে বেশী শীতের মাস ছিল। ফেব্রুয়ারির গড় তাপমাত্রা ছিল মাইনাস চার দশমিক পাঁচ ডিগ্রি। এর আগে এই মাসে যে কোন সময়ে গড় তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রির বেশী ছিল।
ফেব্রুয়ারির শৈত্য প্রবাহে জবুথবু নিউ ইয়র্ক অঞ্চলের বাসিন্দারা মার্চে তাপমাত্রা বাড়বে বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু মার্চের প্রথম দিনটিও তুষারপাতের মধ্যে দিয়ে পার করে হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন তারা।
এ দিনটিতে ৩ থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষারপাত হয়েছে। তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস নয় ডিগ্রিতে নেমে যায়। এর ফলে নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি, লাগোর্ডিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট উঠা-নামা ৪ ঘন্টা বন্ধ থাকে।
উত্তরপূর্বাঞ্চলের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশী তুষারপাতের ঘটনা ঘটেছে নিউ ইয়র্ক রাজ্যের রাজধানী আলবেনী সংলগ্ন বাফেলো, ম্যাসেচুসেটস রাজ্যের বস্টন, রোড আইল্যান্ড রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নর্থ-ইস্ট রিজিওনাল ক্লাইমেট সেন্টারের পরিচালক আর্ট ডিগিটানো এ প্রসঙ্গে বলেন, “সাইবেরিয়াতেও প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ে। কিন্তু তার চেয়েও তীব্রতর শৈত্য প্রবাহ এবার দেখলাম আমরা।”
“বস্টনের ৭টি এলাকায় দেড় শতাধিক বছরের রেকর্ড ভেঙেছে এবারের তুষারপাত। বিশ্ববিখ্যাত নায়েগ্রা জলপ্রপাতে গত দু’মাসে কোনো ট্যুরিস্ট যেতে পারেননি। পানি জমে বরফ হওয়ায় প্রবাহ নেই এবং আশপাশের সমস্ত এলাকায় কয়েক ফুট পর্যন্ত বরফ জমে রয়েছে।”
নিউ ইয়র্ক রাজ্যের বাফেলো, সিরাকাস, বিংহামটন এবং ইথাকা সিটির জনজীবনও স্থবির হয়ে পড়েছে গত দু’মাসের শৈত্যপ্রবাহে। এবার বাফেলোর গড় তাপমাত্রা ছিল প্রায় মাইনাস ১২ ডিগ্রি। এটি ১৯৩৪ সালের রেকর্ড মাইনাস ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে।
আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড অনুযায়ী ১৯৩৪ সালের পর থেকে গত বছর পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি মাসে বাফেলো সিটির গড় তাপমাত্রা ছিল মাইনাস তিন ডিগ্রি’র কিছু বেশি। একইভাবে সিরাকাস সিটিতে প্রায় মাইনাস ১৩ ডিগ্রি, বিংহামটনে মাইনাস ১১ ডিগ্রি এবং ইথাকা সিটিতে ছিল মাইনাস ১২ দশমিক ১১ ডিগ্রি।
সিরাকাস এবং ইথাকায় ফেব্রুয়ারির ১৪ দিন হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রা ছিল।
আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বস্টন সিটির তুষারপাতের পুরনো রেকর্ড ছিল ৪১.৬ ইঞ্চি । সেটি ভেঙ্গে এবার ৬৪.৮ ইঞ্চি তুষারপাতের নতুন রেকডর্ হয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ইলিনয় রাজ্যের শিকাগো সিটিতে তুষারপাতের ১৪০ বছরের পুরনো রেকর্ড এবার মুছে গেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে এই সিটির তাপমাত্রা ১৮৮৪ সালের সর্বনি¤œ তাপমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।
শিকাগোর ও’হ্যায়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮ ফেব্রুয়ারি তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২২ ডিগ্রি। এর আগে ১৮৮৪ সালে একইদিনের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১৭ দশমিক ৭৮ ডিগ্রি, যা ছিল এযাবৎকালের রেকর্ড।