পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের একটি বাড়িতে বিস্ফোরিত বোমা বাংলাদেশে হামলার জন্য তৈরি করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা।
Published : 06 Oct 2014, 03:40 PM
নিহতদের জঙ্গি সম্পৃক্ততাসহ বিস্ফোরণের বিষয়টি নিয়ে এর মধ্যেই নয়াদিল্লি ঢাকাকে সতর্ক করেছে বলে ভারতের গণমাধ্যমের খবর।
টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্ধমানের যে বাড়িতে বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণ হয় সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি কার্যালয় ছিল।
গত ২ অক্টোবর ওই বাড়িতে বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণে নিহত হন শামীম ওরফে শাকিল আহমেদ ও স্বপন ওরফে সুবহান মণ্ডল, যারা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) একটি শাখার সদস্য বলে জানিয়েছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।
ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, বিস্ফোরণের পর গ্রেপ্তার দুই নারীর একজন নিরাপত্তা বাহিনীকে জানিয়েছেন, তারা গত তিন মাসে চার দফায় ‘কাউসার’ ও ‘রাসিক’ নামে দুই বাহকের মাধ্যমে বাংলাদেশে বোমা পাঠিয়েছেন। ওই দিনও তারা বাংলাদেশে পাঠানোর জন্যই বোমা বানাচ্ছিলেন।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বিষয়ে ভারতীয় শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও ডিজিএফআইকে অবহিত করেছেন।
ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, বোমা বানানোর সঙ্গে জড়িত আব্দুল হাকিম নামে ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার আরো একজন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খোলেননি তিনি।
ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বর্ধমানে ওই বিস্ফোরণের পর গুরুতর আহত শামিম ওরফে শাকিল আহমেদ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। আর হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় স্বপন ওরফে সুবহান মণ্ডলের। গুরুতর আহত আব্দুল হাকিম চিকিৎসাধীন।
আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শাকিলের বাড়ি নদিয়ার করিমপুরের বারবাজপুরে, সুবহানের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরে ও আব্দুলের বীরভূমের মহম্মদবাজারে।
ঘটনার দিনই শাকিলের স্ত্রী গুলশানা বিবি ওরফে রাজিয়া বিবি এবং হাকিমের স্ত্রী আমিনা বিবিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আইএনএনএস জানিয়েছে, ২ অক্টোবর বিস্ফোরণের ঘটনার পর আটকের ওই দুই নারীকে রোববার গ্রেপ্তার দেখায় নিরাপত্তাবাহিনী।
বিস্ফোরণের দিনই পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি সদস্যদের সম্ভাব্য অন্তত তিনটি ‘ঘাটিতে’ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালায় ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা।
এসময় তারা ‘মুর্শিদাবাদ ভিত্তিক’ এক ধর্মীয় ‘গুরু’কেও খুঁজছিলেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, ‘বাংলাদেশে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত’ থাকা এই তিন জঙ্গির নাম ও পশ্চিমবঙ্গে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়টি সম্ভবত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারত সরকারকে জানানো হয়েছে।
বিস্ফোরণে নিহত স্বপন মণ্ডলের স্ত্রী আকিনাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল ভবনের মালিক হাসান চৌধুরী এবং আমিনাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তারা। আমিনার বাবা মুর্শিদাবাদের একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে লড়েছেন। তাছাড়া ওই ভবনে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি অফিসও রয়েছে।
এমনকি তৃণমূল থেকে নির্বাচিত এমপিদের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ থেকে পলাতক জামায়াত নেতা ও উগ্র ইসলামপন্থি নেতাদের সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।
বিস্ফোরণস্থল থেকে ২৫টি গ্রেনেড, ১০টি হাতবোমা এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, আইরন অক্সাইড, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডসহ প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক তৈরির উপাদান পাওয়া গেছে খবরে বলা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে শাকিলের স্ত্রী জানিয়েছে, এসব উপাদানগুলো কোলকাতা থেকে আনা হয়েছে। বিস্ফোরণস্থল থেকে বোমার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য ঘড়িও পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে একটি লেদ মেশিন যা পিস্তল তৈরির কাজে ব্যবহার করা হত।
নিরাপত্তাবাহিনী গত শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল গোস্বামীর সঙ্গে এক বৈঠকে এ বিষয়ে সমস্ত তথ্য সরবরাহ করেছে বলে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে।
ওই বৈঠকে ঘটনার তদন্তের ভার জাতীয় তদন্ত সংস্থার সন্ত্রাস বিরোধী দপ্তরের হাতে ন্যস্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কিন্তু মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘স্পর্শকাতরতা’ এবং রাজ্য সরকারের ব্যাপারে কেন্দ্রের নাক না গলানোর বিষয়ে যে আইন রয়েছে তা বিবেচনা করেই পরামর্শটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবরে বলা হয়েছে।