মারিয়ার আঘাতে `বিধ্বস্ত’ ডমিনিকা

পাঁচ মাত্রার হারিকেন মারিয়ার আঘাতে ক্যারিবীয় দ্বীপ ডমিনিকার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির তাণ্ডবে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের ছাদ উড়ে গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2017, 05:15 AM
Updated : 20 Sept 2017, 05:26 AM

বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার রাতে হারিকেনের কেন্দ্রটি সরাসরি লম্বায় ৫০ কিলোমিটারের চেয়েও ছোট ও ২৫ কিলোমিটার প্রশস্ত এই দ্বীপটির ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। 

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ৭২ হাজার বাসিন্দার এই দ্বীপটির কী অবস্থা হয়েছে তা পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে দ্বীপটি প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দুই সপ্তাহ আগে আটলান্টিক মহাসাগরে তৈরি হওয়ার চলতি মৌসুমের প্রথম পাঁচ মাত্রার হারিকেন আরমার হাত থেকে বেঁচেছিল ডমিনিকা, কিন্তু এবার মারিয়ার সরাসির আঘাত মোকাবিলা করতে হয়েছে দ্বীপটিকে।

ঝড়ে ডমিনিকার প্রধানমন্ত্রী রুজভেল্ট স্কেরিটের সরকারি বাসভবনের ছাদ উড়ে গেছে।

মারিয়া আঘাত হানার সময় নিজের ফেইসবুক পোস্টে ডমিনিকার প্রধানমন্ত্রী রুজভেল্ট স্কেরিট জানান, ঝড়ে তার বাড়ির ছাদ উড়ে গেছে।

বলেন, “আমি পুরোপুরি হারিকেনটির কৃপার ওপর আছি। বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।”

এর পরপরই তাকে উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

পরে ফেইসবুক পোস্টে তিনি আরো বলেন, “সকালে উঠে হয়তো আমরা ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিধসের ফলে গুরুতর শরীরিক আঘাত ও সম্ভাব্য মৃত্যুর খবর পেতে থাকব, এই ভয়েই আছি আমি।

“এ পর্যন্ত আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি বা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি তাদের প্রায় সবার বাড়ির ছাদ ঝড়ে উড়ে গেছে। বিমানবন্দর ও সমুদ্র বন্দরগুলো সম্ভবত আরো কয়েকদিন ব্যবহার উপয়োগী থাকবে না।”

মারিয়া পর্বতময় এই দ্বীপ দেশটিকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্কেরিট জানিয়েছেন, তিনি এখন আটকে পড়াদের উদ্ধার ও আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার দিকটিতেই জোর দিচ্ছেন।

ডমিনিকার উত্তরে অবস্থিত ফ্রান্স-নিয়ন্ত্রিত দ্বীপ গুয়াডেলোপেও মারিয়া তীব্র আঘাত হেনেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রকাশিত ছবিতে গুয়াপেলোপ পানিতে তলিয়ে গেছে বলে দেখা গেছে।

উপড়ে পড়া গাছের আঘাতে একজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। দ্বীপপুঞ্জটির সবচেয়ে পূর্বদিকের দ্বীপটির কাছে একটি জাহাজ ডুবে অন্তত দুজন নিখোঁজ রয়েছেন।

বাতাসের তাণ্ডবে সেখানে এখনও ‘অত্যন্ত খারাপ’ আবহাওয়া বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। দ্বীপটির প্রায় ৮০ হাজার বাসিন্দা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে বলে সরকারি এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

ফ্রান্স-নিয়ন্ত্রিত মার্টিনিক দ্বীপ গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পারলে এখানেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে। অপরদিকে সেন্ট লুসিয়ায় কোনো কোনো এলাকায় বন্যা, ভূমিধসের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের (এনএইচসি) বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে আটলান্টিক মহাসাগরে তৈরি হওয়া দ্বিতীয় পাঁচ মাত্রার হারিকেন মারিয়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পূর্ব ক্যারিবিয়ার যুক্তরাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের সর্ব-দক্ষিণের দ্বীপ সেন্ট ক্রোয়িক্স থেকে ১৯০ কিলোমিটার দূরে ছিল।

ঘন্টায় ২৮০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া বাতাসের শক্তি নিয়ে মঙ্গলবার রাতে হারিকেনটি ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডের কাছ দিয়ে অথবা ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে বুধবার পুয়ের্তো রিকোতে আঘাত হানবে বলে জানিয়েছে এনএইচসি।

প্রায় হারিকেন আরমার পথ ধরে উত্তর দিকে এগিয়ে চলা মারিয়া যুক্তরাষ্ট্রের মূলভূখন্ডে আঘাত হানবে কি না তা বলার সময় এখনও হয়নি বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে কেন্দ্রটি।