যুক্তরাষ্ট্রের নৌ বাহিনীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও মেরিন বাহিনীর ডুবুরিরা রণতরীর ক্ষতিগ্রস্ত অংশ এবং সংঘর্ষের এলাকায় অনুসন্ধান কাজে যুক্ত হয়েছেন।
সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ২৪ এর দিকে দক্ষিণ চীন সাগরের মালয়েশীয় জলসীমায় ইউএসএস জন ম্যাককেইন নামের মার্কিন যুদ্ধজাহাজ সঙ্গে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী অয়েল ট্যাংকার আলনিক এমসির সংঘর্ষ হয়।
এতে মার্কিন রণতরীর পোর্ট সাইড ক্ষতিগ্রস্ত হয়; নাবিকরা যে অংশে ঘুমাত সেখানকার বেশ কয়েকটি কম্পার্টমেন্টেও পানি ঢুকে যায়।
সংঘর্ষে পাঁচ মার্কিন নাবিক আহত হলেও তাদের কারো প্রাণনাশের কোনো আশঙ্কা নেই বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মার্কিন নৌবাহিনী।
জাপানের ইয়োকোসুকায় মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ মেরামত কারখানা, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ডার লজিস্টিক গ্রুপ এবং ১৫তম মেরিটাইম এক্সপেডিশনারি ইউনিটের ডুবুরিরা তল্লাশি অভিযানে অংশ নিচ্ছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে মার্কিন নৌবাহিনী জানায়, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি নৌঘাঁটিতে থাকা ইউএসএস আমেরিকার এয়ারক্রাফটগুলো সংঘর্ষের এলাকায় তল্লাশি কাজে যুক্ত সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার এয়ারক্রাফট ও ভাসমান যানগুলোর সঙ্গে যোগ দিয়েছে।
প্রথমদিকে রণতরীর ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং পানি সরিয়ে বিকল্পভাবে জাহাজ চালুর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, পরে ডুবুরিরা ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণের কাজ শুরু করেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবারও বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক বাহিনী এয়ারক্রাফট, জাহাজ ও ডুবুরিদের নিয়ে সিঙ্গাপুরের পূর্ব থেকে মালয়েশিয়ার উপকূল পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা চালায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার সিঙ্গাপুর বন্দরে নোঙর করে রাখা দুর্ঘটনাকবলিত রণতরীর ক্ষতিগ্রস্ত অংশে তল্লাশি চালানো হবে বলে জানায়।
“পাশাপাশি ডুবুরিরা জাহাজের খোলস ও পানি ঢুকে যাওয়া অংশে ক্ষতির পরিমাণও নির্ধারণ করবেন।”
সোমবার দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে জাহাজের ক্রুদের চেষ্টায় খোলসংশ্লিষ্ট অংশ ছাড়া অন্যত্র পানি ঢুকতে পারেনি বলেও বিবৃতিতে জানায় সপ্তম নৌবহর।
সিঙ্গাপুরের মেরিটাইম অ্যান্ড পোর্ট অথরিটি জানিয়েছে তারা ২৫০ জন উদ্ধারকর্মীকে তল্লাশিকাজে নিয়োজিত করেছে, যারা রাতেও তাদের কাজ চালিয়ে গেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন নৌ কর্মকর্তাদের বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, মালাক্কা প্রণালীর দিকে যাওয়ার সময় মার্কিন যুদ্ধজাহাজটির স্টিয়ারিংয়ে ত্রুটি দেখা দেয়; যার ধারাবাহিকতায় বাধে সংঘর্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর নেভাল অপারেশনের প্রধান জন রিচার্ডসন জানান, ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা সাইবার অপরাধ বা অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে এই সংঘর্ষ হয়েছে তার কোনো ইঙ্গিত মেলেনি।
“যদিও সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে,” টুইটারে বলেন তিনি।
রিচার্ডসন জানান, সংঘর্ষের পর বিশ্বব্যাপী মার্কিন বিভিন্ন ফ্লিটের কমান্ডারদের এক থেকে দুইদিনের জন্য নিয়মিত কার্যক্রম স্থগিত রেখে নিরাপত্তা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে নজর দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সপ্তাহখানেকের মধ্যে এই কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি; জাপানে প্রশিক্ষণে নিয়োজিত মার্কিন বাহিনীর সদস্যরা জাহাজ পরিচালনা ও যুদ্ধে দক্ষ কি না তা নিয়েও বিস্তৃত পর্যালোচনা করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের সদরদপ্তর জাপানে অবস্থিত।
এ নিয়ে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহর চারটি বড় দুর্ঘটনায় পড়লো। এ কারণে পুরে বহর নিয়ে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন নৌবাহিনী, নিরাপত্তার জন্য বহরের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সপ্তম নৌবহরের জনসংযোগ বিষয়ক এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, ক্ষয়্ক্ষতি নির্ধারণের পর ইউএসএস ম্যাককেইনকে চাঙ্গি নৌ ঘাঁটিতে সরিয়ে নিয়ে সারিয়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সংঘর্ষে পড়া ইউএসএস জন এস ম্যাককেইনের নামকরণ করা হয়েছে রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইনের বাবা ও দাদার নামে; তারা দুজনেই যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল ছিলেন।