ট্রাম্প-পুতিনের যে সাক্ষাতের কথা আগে প্রকাশ করা হয়নি

চলতি মাসের প্রথমদিকে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নেতাদের এক নৈশভোজের সময়ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আলাপচারিতা করেছিলেন বলে প্রকাশ পেয়েছে। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2017, 06:49 AM
Updated : 19 July 2017, 06:52 AM

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে নৈশভোজে এই আলাপচারিতার কথা প্রথম জানান রাজনৈতিক ঝুঁকি বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইউরেশিয়া গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইয়ান ব্রেমার।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা দুই প্রেসিডেন্টের এই আলাপচারিতার কথা স্বীকারও করেছেন।

এর আগে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের দুই বিশ্বনেতার এই আলাপচারিতার কথা প্রকাশ করেনি হোয়াইট হাউস।

জি২০ সম্মেলনে ৭ জুলাই ট্রাম্প-পুতিন দুই ঘন্টা ধরে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকের পর ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো ধরনের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুতিন।

এই অভিযোগটির কারণেই সম্মেলন চলাকালীন ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের সাক্ষাৎগুলোর ওপর কড়া নজর রাখছিল গণমাধ্যগুলো। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রথম ছয় মাস এই অভিযোগটিই তাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণাকালেও ট্রাম্প পুতিনের প্রশংসা করে অনেক কিছু বলেছিলেন।

জি২০ সম্মেলনে নেতাদের এক জমায়েতে ট্রাম্প-পুতিনের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল। এক ভিডিওতে এই সাক্ষাৎটি দেখানো হয়েছিল। পরে দুই নেতা ওই আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন, যার একটি সংক্ষিপ্ত অংশে সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন। 

ওই দিন সন্ধ্যায় দুই নেতাই জি২০ নেতাদের জন্য আয়োজিত এক নৈশভোজে অংশ নেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের পাশেই বসেছিলেন পুতিন। নৈশভোজের শেষ দিকে ট্রাম্প তাদের কাছে আসেন এবং পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা। 

এই আলাপচারিতার কথা এতদিন প্রকাশ করা হয়নি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে ‘দ্বিতীয় কোনো বৈঠক’ হয়নি, নৈশভোজের শেষে শুধু কিছু কথাবার্তা হয়েছে। হোয়াইট হাউস দ্বিতীয় বৈঠকের কথা ‘গোপন’ করার চেষ্টা করছে বলে যে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, তা মিথ্যা, বিদ্বেষপূর্ণ এবং অবাস্তব।”

মঙ্গলবার রাতে এক টুইটে ট্রাম্প বলেছেন, “পুতিনের সঙ্গে গোপন নৈশভোজের ভুয়া সংবাদের গল্প ‘অসুস্থতা’। জার্মানির চ্যান্সেলর জি২০-র সব নেতা ও তাদের স্ত্রীদের আমন্ত্রণ করেছিলেন। সাংবাদিকরা তা জানে!”

কিন্তু ব্রেমার জানিয়েছেন, নৈশভোজের মাঝপথে ট্রাম্প নিজের আসন ছেড়ে পুতিনের কাছে যান এবং প্রায় এক ঘন্টা ‘একান্তে প্রাণবন্তভাবে’ কথাবার্তা বলেন, এ সময় ‘পুতিনের নিজস্ব অনুবাদকরা ছাড়া আর কেউ সেখানে ছিল না’।

এই আলাপচারিতায় যুক্তরাষ্ট্রের অনুবাদকদের অনুপস্থিতিতে নৈশভোজে উপস্থিত অন্যান্য নেতারা বিস্মিত হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন ব্রেমার। এই ঘটনাকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা প্রটোকলের লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

এর জবাবে হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই নৈশভোজে প্রত্যেক দেশের নেতা এবং তাদের স্ত্রীদের জন্য মাত্র একজন অনুবাদক রাখার অনুমতি ছিল।

টেবিলে ট্রাম্প বসেছিলেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের স্ত্রীর পাশে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের যে অনুবাদক ছিলেন, তিনি কেবল জাপানি ভাষাই জানতেন বলে জানান হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা।

“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন তারা রাশিয়ার অনুবাদক ব্যবহার করেছেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অনুবাদক রুশ ভাষা জানতেন না।”

তবে দু্‌ই নেতার মধ্যে কি বিষয়ে কথা হয়েছে ওই কর্মকর্তা তা জানাতে পারেননি।

‘রাশিয়া হস্তক্ষেপ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নির্বাচিত হতে সাহায্য করেছে’, এই অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ও বিশেষ কাউন্সেল। এই তদন্ত চলাকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের এ ধরনের আলাপচারিতা প্রকাশের ঘটনায় নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।