অস্ট্রেলিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ডেবিতে নিহত ১

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ডেবির আঘাতে অস্ট্রেলিয়ার অন্তত এক জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2017, 04:04 PM
Updated : 28 March 2017, 04:04 PM

বিবিসি জানায়,ডেবির আঘাতে দেশটির  উত্তর-পশ্চিম উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রচণ্ড বাতাস এবং মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে হাজার হাজার বাড়ি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুরে কুইন্সল্যান্ডের বোয়েন ও এয়ারলি সৈকতের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে ক্যাটাগরি চার মাত্রার ঘূর্ণিঝড়টি অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডে উঠে আসে। এসময়  কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঘটনায় ঘটে।

ভূখণ্ডে উঠে আসার সময় ঘূর্ণিঝড় ডেবি ঘণ্টায় ২৬৩ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূল এলাকায় তাণ্ডব শুরু করে।

তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এটি শক্তি হারায় এবং দুই মাত্রার ঝড়ে পরিণত হয়ে অস্ট্রেলিয়ার উপর দিয়ে বয়ে যেতে শুরু করে। তবে বাতাসের বেগ কিছু কমে গেলেও কয়েক ঘণ্টার ধরে ডেবির তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল বলেন, এখন পর্যন্ত তিনি ঘূর্ণিঝড়ে একজন নিহত হওয়ার খবর জানতে পেরেছেন।

এরই মধ্যে দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ শুরু হয়েছে গেছে বলেও জানান তিনি। টার্নবুল বলেন, “উদ্ধারকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছানোর পর ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র আস্তে আস্তে বোঝা যাবে। যদিও পরিস্থিতি দ্রুতই খারাপের দিকে যাচ্ছে।”

জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন,“আপনারা সাবধান হন এবং নিরাপদ থাকুন। বুধবার পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানের প্রস্তুতি নিন।”

সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার এবং নৌবাহিনীর জাহাজ ত্রাণ নিয়ে কুইন্সল্যান্ডের দিকে রওয়ানা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এর আগে কুইন্সল্যান্ডের প্রিমিয়ার আনাস্তাসিয়া পালাসে জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে কারণ ব্যাপক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে এবং ফোনে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

কুইন্সল্যান্ডের পুলিশ কমিশনার আয়ান স্টুয়ার্ট জানিয়েছেন, প্রোসারপাইনে একটি দেয়াল ধসে এক ব্যক্তি গুরুতর জখম হয়েছেন।তবে তিনিই মারা গেছেন কিনা তা জানা যায়নি।  ক্যারাভান পার্কের স্বত্তাধিকারী রোজ উয়িলকোকস জানিয়েছেন, বোয়েনের কাছে তার বিষয়-সম্পত্তি ‘আবর্জনায়’ পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, “সেখানে অন্তত ৫০টি গাছ উপড়ে পড়েছে। প্রতিবেশীদের ছাদগুলো পার্কে এসে পড়েছে। আমাদের শেডগুলোও ভেঙে পড়েছে।”

বিদ্যুৎ সঞ্চালন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কখন স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারছেন না তারা। পরিস্থিতি বাইরে বের হওয়ার মতো নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে ঘরে ভিতরে অবস্থান করার বিষয়ে সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ।

২০১১ সালে কুইন্সল্যাণ্ডে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসির তাণ্ডবের পর এটাই ওই অঞ্চলে আসা সবচেয়ে শক্তিশালী সাইক্লোন বলে আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছিলেন। এ পরিস্থিতিতে ২৫ হাজার মানুষকে উপকূলীয় এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।

অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, মূল ভূখণ্ডে আসার আগে ঘূর্ণিঝড়টি হুইটসানডে দ্বীপপুঞ্জে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। সেখানে ঘরবাড়ির ছাদ উড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শার্লি নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বাতাস এতটাই শক্তিশালী যে, মনে হচ্ছে বাঁ দিক থেকে ট্রেন ছুটে যাচ্ছে ডান দিকে। গাছগুলো ক্রমাগত এদিক-ওদিক ঝঁকি খাচ্ছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ডেবির প্রভাবে দুই মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের নিচু এলাকা প্লাবিত হতে পারে। সেই সঙ্গে চলতে পারে ভারি বৃষ্টি।

স্থানীয় বাসিন্দারা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শুকনো খাবার ও জরুরি সামগ্রী মজুদ করতে শুরু করায় সুপার মার্কেটগুলো প্রায় খালি হয়ে গেছে। কুইন্সল্যান্ড কর্তৃপক্ষ ১০২টি স্কুল, ৮১টি শিশু নিকেতন এবং দুটি বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।