জুহেল মিয়া নামে ওই স্কুলশিক্ষককে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় তার সঙ্গে অপরাধীদের মতো আচরণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ এসেছে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রগুলোতে।
২৫ বছর বয়সী জুহেল মিয়া সাউথ ওয়েলসের একটি বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক। সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি নিউ ইয়র্ক রওনা হয়েছিলেন।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আইসল্যান্ডের রাজধানী রিকিয়াভিকে তাকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় বলে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান জানিয়েছে।
দি সান লিখেছে, নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘জনপ্রিয় ও শ্রদ্ধেয়’ শিক্ষক হিসেবেই পরিচিত জুহেল মিয়া। তাকে নামিয়ে আনার পর শিক্ষার্থীরা কাঁদছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ১০ ফেব্রুয়ারি সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের তার দেশে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দেশগুলো হচ্ছে ইরান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, সুদান, সোমালিয়া ও লিবিয়া।
তুমুল বিক্ষোভের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত প্রেসিডেন্টের ওই নির্বাহী আদেশ স্থগিত করে।
এর মধ্যেই হেনস্তার শিকার হলেন জুহেল মিয়া, যার বাবা-মা বাংলাদেশি হলেও তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিক।
তিনি গার্ডিয়ানকে বলেন, “আমার পরিবারের কেউ ওই সাতটি দেশের নয়। গত বছরও আমার ভাই ফ্লোরিডা ঘুরে এসেছে। আমি বুঝতে পারছি না, কেন আমার সঙ্গে এমন হল।”
শিক্ষকতা পেশায় থাকার কারণে চট করে রেগে না ওঠা জুহেল এই ঘটনায় বেশ রেগেছেন।
“আমার ভীষণ ভীষণ রাগ হচ্ছে। সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছিল, সাধারণ যাত্রীরাই শুধু নয়, সহকর্মীরা, আমার ছাত্র-ছাত্রীরাও। এই ঘটনায় আমার মাথা হেট হয়ে গেছে, মনে হচ্ছিল আমি যেন এক ভয়ানক অপরাধী। সবাই নিশ্চয়ই তাই ভাবছিল, আমার সহকর্মী, আমার শিক্ষার্থীরা। আমি এখন কোথায় দাঁড়াই?”
জুহেল বলেন, ফ্লাইট ছাড়ার একটু আগেই এক কর্মকর্তা তার কাছে এসে বলেন, তিনি বিমানে থাকতে পারবেন না। তারপর তাকে পাহারা দিয়ে বিমান থেকে বের করে দেওয়া হয়।
বিমানে ওঠার আগে চুলচেরা তল্লাশির শিকার হতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পাসপোর্ট দেখার পর একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে সবকিছু খুলে ৫ মিনিট ধরে দুজন ভালভাবে পরীক্ষা করার পর তাকে যেতে দিয়েছিল।
বিমান থেকে নামিয়ে জুহেল মিয়াকে একটি হোটেলে কক্ষে দু’ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল। এরপর যুক্তরাজ্যে ফিরে যান তিনি।
“এই ধরনের ঘটনা কারও সঙ্গে ঘটা উচিৎ নয়। আমি সব প্রক্রিয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সেরেছিলাম। তারপরও এমন আচরণ করা হল, যেন আমি এক অপরাধী,” বলেন জুহেল।
জুহেলকে নামিয়ে দেওয়ার পর তার সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা ওই ফ্লাইটে নিউ ইয়র্ক রওনা হয়েছিলেন।
জুহেলের সঙ্গে এই আচরণে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নেথ পোর্ট টালবোট কাউন্টি বারা কাউন্সিল।
বৈধ কাগজপত্র থাকার পর তাকে বাধা দেওয়ায় শহর কর্তৃপক্ষ নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করে লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে বলে ইনডিপেডেন্ট জানিয়েছে।
সংস্থার এক মুখপাত্র বলেছেন, তারা তাদের সম্মানীত একজন শিক্ষকের সঙ্গে এমন আচরণের ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
ঘটনাটি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জেনেছে। মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র ইনডিপেনডেন্টকে বলেছেন, “ব্রিটিশ যে নাগরিককে রিকিয়াভিকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার প্রতি আমাদের সমর্থন থাকবে।”
এই বিষয়ে লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কোনো মন্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান।