যুক্তরাজ্যকে অবিলম্বে জোট ছাড়তে বলল ইইউ

যুক্তরাজ্যকে দ্রুত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগের আলোচনা শুরু করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন নেতারা। দেরি হলে দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে বলে মত দিয়েছেন তারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2016, 03:01 PM
Updated : 25 June 2016, 08:17 AM

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইইউ ছাড়ার প্রক্রিয়াটি পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দিতে চাইলেও এ নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে রাজি নন ইউরোপীয় নেতারা।

যুক্তরাজ্যের গণভোটে ইউরোপের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এ জোটটির সঙ্গে ৪১ বছরের বন্ধন ছেঁড়ার পক্ষে রায় আসার পর হতাশ ইইউ নেতারা ‘স্থিতিশীলতা ও সংহতি’র আহ্বান জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে ইইউ’র পরিবর্তন ও সংস্কারের কথাও বলেছেন।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জঁ ক্লদে জাঙ্কার জোর দিয়ে বলেছেন, “(যুক্তরাজ্য সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও) ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি ২৭ সদস্য রাষ্ট্র একসঙ্গে পথ চলবে।”

বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে ইইউ-তে থাকা না থাকা নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৫২ শতাংশ ব্রিটিশ ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে এবং ৪৮ শতাংশ মানুষ ইইউ য়ে থাকার পক্ষে ভোট দেয়।

এরপরই পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি যুক্তরাজ্যের ইইউ ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি ছেড়ে দেন নতুন প্রধানমন্ত্রীর ওপর।

কিন্তু ইইউ নেতারা চান আলোচনা আগামী সপ্তাহেই শুরু হোক। অক্টোবরে নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে নারাজ তারা।

ব্রেক্সিটে বিশ্ব বাজারে বড় ধরনের ঝাঁকুনির প্রেক্ষাপটে শুক্রবার  সংকটকালীন জরুরি আলোচনায় বসেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জাঙ্কার, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুলজ, ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক এবং ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে।

পরে তাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে ব্রেক্সিটের জন্য দুঃখপ্রকাশ করার পাশাপাশি ব্রিটিশদের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানানো হয়। আর এ বিবৃতিতেই যুক্তরাজ্যকে যত দ্রুত সম্ভব জনগণের সিদ্ধান্ত কার্যকরের আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “ইইউ  ত্যাগের প্রক্রিয়া যত বেদনাদায়কই হোক না কেন,  যুক্তরাজ্যের যত দ্রুত সম্ভব জনগণের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা উচিত। কারণ, এক্ষেত্রে কোনও ধরনের বিলম্ব অকারণে অনিশ্চয়তা বাড়াবে।”

নেতারা বলেন,“আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ সংক্রান্ত শর্তাবলী নিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত।

গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের সঙ্গে অর্থবাজার, অভিবাসন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল সেগুলো আর নতুন করে আলোচনা হবে না বলে জানিয়েছেন নেতারা।

তবে তারা জানান, ইইউ ত্যাগের জন্য যুক্তরাজ্যকে অবশ্যই লিসবন চুক্তির আর্টিকেল ফিফটি  আহ্বান করতে হবে, যার আওতায় বিচ্ছিন্নতা নিয়ে আলোচনা চলবে।

তারা আরও জানান, কিভাবে সদস্যপদ বাতিল করা হবে সে বিষয়ে আলোচনার জন্য দুই বছর সময় থাকবে।

শনিবার ইইউ-র প্রতিষ্ঠাতা ছয় সদস্য জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গ এর প্রতিনিধিরা বার্লিনে এক বৈঠকে বসবেন। এছাড়া, ভোট মূল্যায়নের জন্য আগামী মঙ্গলবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিশেষ অধিবেশন বসবে।

ইইউ-র কোনও কোনও নেতা বেক্সিটের প্রভাব পুরো জোটের ওপর পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রজেজ ডুডা বলেন, “অন্য সদস্যদের ইইউ ত্যাগ আটকাতে সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে।”

ব্রেক্সিট ভোটের পর যুক্তরাজ্যের ইউকিপ নেতা নাইজেল ফারাজের মন্তব্য, “ইইউ মরতে বসেছে।” ব্রেক্সিটের পর বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ডের দামও নাটকীয়ভাবে পড়ে গেছে।