জলবায়ু সম্মেলন শুরুর মাঝেই ধোঁয়াশা ঢাকা বেইজিং-দিল্লি

বিশ্বজুড়ে ধরিত্রীকে রক্ষার দাবির মুখে নতুন জলবায়ু চুক্তির আশা নিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে শুরু হয়েছে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন। আর এর মাঝেই চ্যালেঞ্জ হয়ে বিরাজ করছে ধোঁয়াশায় ঢাকা চীন এবং ভারত পরিস্থিতি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2015, 11:25 AM
Updated : 30 Nov 2015, 12:03 PM

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এ দুইটি দেশই ঘন ধোঁয়াশায় ঢাকা পড়েছে। ধোঁয়াশা ঢাকা  চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের অবস্থা এতটাই খারাপ যে,  রোববার সেখানে এ বছরের সর্বোচ্চ ধোঁয়াশা সতর্কতা ‘অরেঞ্জ লেভেল’ জারি করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব নির্মাণকাজ, পরিবহন, অধিবাসীদেরকে ঘরে থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানায়, রোববার বেইজিংয়ের কিছু কিছু স্থানে বায়ুদূষণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচিত নিরাপদ মাত্রার চেয়ে ১৭ গুণ বেশি ছিল।

চীনের শহরগুলোতে এ ধরনের সমস্যার জন্য দায়ী বায়ুদূষণ। যার কারণ হচ্ছে প্রতিকূল আবহাওয়া। তাছাড়া, বেইজিংয়ে কয়লানির্ভর শিল্প-কারখানা, উত্তাপন প্রক্রিয়া, নির্মাণাধীন ভবনগুলো থেকে ধুলো এবং এগুলোর সঙ্গে আর্দ্রতা ও বাতাসের অভাবে ধোঁয়াশা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতেও বায়ু-দূষণের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। কৃষিখামারগুলোতে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ধানের খড়-বিচালি পোড়ানো, স্থানীয়ভাবে দূষণ সৃষ্টিকারী গ্যাস নির্গমনসহ আবহাওয়া ঘটিত নানা কারণে বায়ুদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এ দুটি দেশের নেতারাই এবারের প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। তাদের দুজনেরই সামনে রয়েছে দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ। শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি দূষণ মোকাবেলায় তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে সম্মেলনের আলোচনায়।

ধোঁয়াশার কারণে চীন গত বছর বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নিতে ‍শুরু করলেও পরিবেশ বিষয়ক কর্মকর্তারা বলছেন, বায়ু স্বাস্থ্যসম্মত পর্যায়ে আনতে চীনের কমপক্ষে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যাবে।

এ ধীরোগতির মধ্যে এখন দেশে বিপজ্জনক ধোঁয়াশার কারণে চীনের পাশাপাশি ভারতও বায়ুদূষণের জন্য দায়ী গ্রিন হাউজ গ্যাস, বিশেষত, কার্বন নির্গমন কমাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বাড়তি চাপে পড়েছে।

বিশ্বে কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য এবারের জলবায়ূ সম্মেলনের আলোচনায় ১৯৫ টি দেশ দু’সপ্তাহের মধ্যে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার চেষ্টা চালাবে। বিশ্ব উষ্ণায়ন না বাড়তে দেওয়ার জন্যই কার্বন নির্গমন কমানোর ওপর এ জোর দেয়া হচ্ছে।

বিশ্ব উষ্ণায়ন মোকাবেলায় এ সম্মেলন থেকে প্রয়োজনীয় চুক্তি করা এবং উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য নেতাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে।

সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন ১৪৭টি দেশের নেতারা। আলোচনা থেকে স্বচ্ছ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বড় ধরনের ঘোষণা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে গরিব দেশগুলোর বরাবরের মতোই আশঙ্কা করছে, নতুন চুক্তির মধ্য দিয়ে তাদের স্বার্থের দিকটি পেছনেই পড়ে থাকতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত বিশ্ব দায়ী হলেও এর ভুক্তভোগী দরিদ্র দেশগুলো।

সমুদ্র উপকূলবর্তী অনেক দেশই তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব দেশের কিছু অঞ্চল এরই মধ্যে প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই বলছেন, প্যারিস সম্মেলনে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সমঝোতা না হলে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের আরও মারাত্মক সব ক্ষতিকর প্রভাবের মুখে পড়বে।