অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে সমালোচনার মধ্যেই মিনায় পদদলনে হতাহতের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে সৌদি আরব সরকার, যাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৬৯ জন।
Published : 26 Sep 2015, 08:17 PM
দুই দিন আগের ওই ঘটনায় মোট ৯৩৪ জন আহত হয়েছেন বলে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ।
তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত পাওয়া সর্বশেষ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, নিহত হয়েছেন ৭৬৯ জন। এই সংখ্যা আগে পাওয়া তথ্যের চেয়ে ৫২ জন বেশি।”
এই ৫২ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।
গত বৃহস্পতিবার সৌদি আরবে ঈদের দিন সকাল ৯টার দিকে মিনায় ‘শয়তানের স্তম্ভে’ পাথর ছুড়তে যাওয়ার পথে পদদলনের এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সৌদি সিভিল ডিফেন্স ৭১৭ জন নিহত এবং আরও অন্তত ৮৬৩ জনের আহত হওয়ার খবর দিলেও হতাহতের সংখ্যা নিয়ে শুক্রবার পুরোপুরি নীরব থাকে সৌদি সরকার।
এদিকে ইরানের হজ সংস্থার প্রধান সাঈদ ওহাদিকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শুক্রবার বলা হয়, সৌদি সরকার সঠিক তথ্য ‘প্রকাশ করছে না’, মিনায় নিহতের সংখ্যা ‘প্রায় দুই হাজার’।
নিহতদের মধ্যে ১৩১ জন ইরানি দাবি করে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, এই ঘটনার দায় সৌদি সরকারকেই নিতে হবে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বেতারে বলা হয়, সৌদি বাদশাহর ছেলের গাড়িবহর ‘মিনার কেন্দ্রস্থলে আসায়’ তীব্র ভিড়ে পদদলনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
হজযাত্রীরা যেসব সড়ক দিয়ে এসে শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে পাথর মেরে ওই এলাকা থেকে চলে যান, হঠাৎ সেইসব সড়কের মধ্যে দুটি সড়ক বন্ধ থাকায় হজযাত্রীরা ভিড় এড়াতে বা সরে যেতে ব্যর্থ হন বলেও দাবি করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
হজের আয়োজন করে সৌদি সরকার প্রতিবছর কয়েক বিলিয়ন ডলার আয় করলেও হাজযাত্রীদের বিষয়ে আগের মত খেয়াল রাখা হচ্ছে না বলে হাজিদের মধ্য থেকেই অভিযোগ ওঠে।
অন্যদিকে সৌদি হজ কমিটির প্রধান প্রিন্স খালেদ আল-ফয়সাল হুড়োহুড়ির জন্য ‘আফ্রিকান নাগরিকসহ হাজিদের একটি দল’কে দায়ী করেন। সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, হাজিরা নির্দেশনা ঠিকমত অনুসরণ না করায় এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা গ্রান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আল শেখও শনিবার বলেন, মিনার এই প্রাণহানির ঘটনা ‘মানুষের হাতে ছিল না’। এ ঘটনার জন্য সৌদি উপপ্রধানমন্ত্রী ও সুপ্রিম হজ কমিটির প্রধান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে দায়ী করা ঠিক হবে না বলেও তিনি মত দেন।
এরপর সৌদি সময় শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে এসে হতাহতের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেন সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, যদিও তাদের মধ্যে কোন দেশের কতজন- সে তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি শনিবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এক দীর্ঘ বক্তৃতায় মিনার ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন।
সৌদি আরব ও ইরান- দুই দেশই মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের দাবিদার। বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলারের হজ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি এককভাবে সৌদি আরবের হাতে না রেখে ‘বহুজাতিক’ ব্যবস্থাপনায় হওয়া উচিত বলেও দাবি রয়েছে ইরানের।