চার বছর আগে জেমি ভার্ডিকে কেনার সময় তার যোগ্যতা নিয়েই সন্দিহান ছিলেন লেস্টারের মালিক ভিচাই শ্রিবধানাপ্রভা। তবে ওই সময় কোনো লিগে না খেলা অখ্যাত এক খেলোয়াড়ের সঙ্গে চুক্তি করে যে জুয়া তিনি খেলেছিলেন, তাতে আজ ভীষণ খুশি থাইল্যান্ডের এই কোটিপতি ব্যবসায়ী।
Published : 04 May 2016, 06:54 PM
‘ধনী ক্লাবই ছড়ি ঘোরাবে ইপিএলে’
মহাতারকার প্রয়োজন নেই লেস্টারের
‘টিংকারম্যান’ থেকে চ্যাম্পিয়ন রানিয়েরি
লেস্টারের এমন সাফল্যের জন্যই ফুটবল ভালোবাসি: মেসি
মৌসুমের শুরু থেকে একের পর এক বিস্ময় উপহার দেওয়া লেস্টারের গত সোমবার প্রিমিয়ার লিগ জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। ক্লাবের ১৩২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায় লেস্টারের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গল্প রূপকথাকেও হার মানায়।
বিভিন্ন দল থেকে বাদ পড়া খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া একটা দল, অবনমন এড়ানোই ছিল যাদের প্রাথমিক লক্ষ্য, এমন এক দলের সাফল্যের চূড়ায় ওঠার অন্যতম নায়ক ভার্ডি।
বর্তমানে ইংলিশ ফুটবলের তৃতীয় সারির দল ফ্লিটউড টাউন থেকে ২০১২ সালে ১০ লাখ পাউন্ড ট্রান্সফার ফিতে লেস্টারে যোগ দিয়েছিলেন ভার্ডি। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ১১ ম্যাচে গোল করা ২৯ বছর বয়সী এই তারকা ২০১৫-১৬ মৌসুমে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ফুটবল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন।
এ প্রসঙ্গে থাইল্যান্ডের ‘এ ডে’ সাময়িকীকে শ্রিবধানাপ্রভা বলেন, “আমি (ওই সময়ের কোচ) নাইজেল পিয়ারসন ও (প্রধান স্কাউট) স্টিভ ওয়ালসকে ছেলেটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এক সপ্তাহের প্রতিবেদন পরীক্ষা করে আমার মনে হচ্ছিল, (তাদের প্রতিবেদন) ঠিক হতে পারে; কিন্তু ওইসব সমর্থকদের (যারা বলবে, কোনো লিগে না খেলা এক জনকে আমরা কিভাবে ১০ লাখ পাউন্ডে কিনলাম) আমাকে জবাব দিতে হবে। (ভার্ডিকে কিনলে) তাদের কাছে আমি বিশ্বের সবচেয়ে বোকা ক্লাব মালিক হয়ে উঠতে পারি।”
“তাই আমি দুজনকেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আগামী মৌসুমে আমার খেলোয়াড় কেনার বাজেট যদি ১০ লাখ পাউন্ডই হয় তাহলে আপনারা কাকে কিনবেন? তারা বলেছিল ‘ভার্ডি’। তখন আমি সায় দিই।”
এই সিদ্ধান্তে সব সমর্থক ক্ষুব্ধ ছিল বলেও জানান শ্রিবধানাপ্রভা।
“কেউ কেউ বলেছিল, “আপনি কি পাগল? কোনো লিগে না খেলা এক জনের জন্য এত খরচ কেন?”
“তখন আমি মনে করেছিলাম, ইপিএলে খেলতে যা প্রয়োজন সেটা তো নেই এই খেলোয়াড়ের। যে দিন আমরা তাকে কিনলাম, সে আমার কাছে এল আর বললো, ‘আমার জীবন পাল্টে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’”
২০১৫ সালের জুনে আন্তর্জাতিক অভিষেক হওয়া ভার্ডি একে একে সেসব প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন করছেন, যা তিনি ক্লাবের মালিককে দিয়েছিলেন।
“আমরা যখন তার চুক্তি বাড়িয়েছিলাম, সেদিন আমরা প্রিমিয়ার লিগে উঠি। আমার মনে আছে, সে দিন সে আমার কাছে এসে আবেগআপ্লুত হয়ে বলেছিল, আমরা যেভাবে তার উপর বিনিয়োগ করেছি তা কখনোই সে ভুলবে না। ক্লাবকে সফল করতে, ইংল্যান্ড দলে ডাক পেতে সে সব কিছু করবে।”
“আমি তার মুখের দিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘কি? ইংল্যান্ড দলে ডাক পাবে? তোমার কি মাথা নষ্ট হয়ে গেছে?’ সে বলেছিল, ‘দেখা যাবে। এক দিন আমি ইংল্যান্ডের হয়ে খেলব।”
সে সময়ে মনে হওয়া অসম্ভব স্বপ্নগুলোই আজ সত্যি হয়েছে। এখন প্রিমিয়ার লিগ জয়ের পদক ভার্ডির পকেটে। ফ্রান্সে আগামী ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ও আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেই খেলোয়াড়ের অপেক্ষায়, যে সব প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাওয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছে।