শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে কান ধরে উঠ-বস করানোর ঘটনায় সংবাদ শিরোনাম হওয়া নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে এক ঘুষের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2017, 06:37 AM
Updated : 24 May 2017, 12:19 PM

পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে নারাণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্ত বুধবার এই আদেশ দেন বলে পাবলিক প্রসিকিউটর ওয়াজেদ আলী খোকন জানান।

তবে বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে আসা শ্যামল কান্তি ভক্ত বলেছেন, তাকে চাপে রাখতে ‘প্রভাবশালী এক ব্যক্তির নির্দেশে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ ওই মামলা করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যাণদীতে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক মোর্শেদা বেগম এই মামলার বাদী। আর আসামি শ্যামল কান্তি ভক্ত ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

মোর্শেদা বেগমের অভিযোগ, চাকরি এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার কথা বলে ২০১৪ সালে তার কছে থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও শ্যামল কান্তি তা করে দেননি। টাকা ফেরত চাইলে তা দিতেও অস্বীকার করেছেন শ্যামল কান্তি।

গত বছরের ১৩ মে ওই স্কুলে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের নির্দেশে শারীরিক নির্যাতন ও কান ধরে উঠ-বস করানোর ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

ওই ঘটনার পর বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ শ্যামলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে।

বিভিন্ন মহল থেকে সে সময় স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হলেও তিনি সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, শিক্ষককে নয়, নাস্তিককে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

শ্যামল কান্তি ভক্ত (ফাইল ছবি

কিন্তু পরে হাই কোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলেও ইসলাম ধর্ম বা আল্লাহকে নিয়ে শ্যামল কান্তির কটূক্তি করার কোনো সত্যতা মেলেনি। বরং তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সাংসদ সেলিম ওসমানের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

এদিকে কান ধরে উঠ-বসের ঘটনার দুই মাসের মাথায় ২৭ জুলাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, শিক্ষার্থীকে মারধর ও শিক্ষক মোর্শেদাকে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে তিনটি মামলার আবেদন নারায়ণগঞ্জের আদালতে জমা পড়ে।

প্রাথমিক শুনানি করে আদালত প্রথম দুটি মামলার আবেদন খারিজ করে দিলেও মোর্শেদা বেগমের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে বন্দর থানা পুলিশকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়।

সেই তদন্ত শেষে বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন অর রশিদ গত ১৭ এপ্রিল শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে আদালতে  অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

সেই অভিযোগপত্র আমলে নিয়েই আদালত বুধবার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেয়।  

বাদীপক্ষে আদালতে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান। শ্যামল কান্তির পক্ষে ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান।

আদেশের পর সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬১/৪১৭/৪০৬/৪২০ ধারায় অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।”

অন্যদিকে শ্যামল কান্তির আইনজীবী সাখাওয়াত বলেন, “আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। তিনি যাতে আত্মসর্মপণ করে জামিন নিতে পারেন, সেই চেষ্টা করব আমরা।”