মেয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার মা  

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় মায়ের ‘অনৈতিক কাজে বাধা দেওয়ায়’ নিজের ছেলে ও মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কে এম রায়হান কবীর শরীয়তপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2017, 04:14 PM
Updated : 19 May 2017, 05:02 PM

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ওই নারীর কিশোরী মেয়ে নড়িয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করে। শুক্রবার দুপুরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে হেফাজতে (রিমান্ড) নেওয়ার আবেদন করেছে।

নড়িয়া পৌরসভার ঘোষপাড়ার ইতালি প্রবাসীর এই স্ত্রী ছেলে ও মেয়ে নিয়ে পৌর এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। মেয়ে (১৩) সপ্তম শ্রেণিতে এবং ছেলে (৮) দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ইতালি প্রবাসী ওই ব্যক্তি গত ৭/৮ বছর ধরে দেশে আসেননি।  

মেয়ের অভিযোগে বলা হয়, ২০১১ সালে নড়িয়া থানার এক এসআইয়ের সঙ্গে এই প্রবাসীর স্ত্রীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং এক পর্যায়ে তারা অনৈতিক সম্পর্কে জড়ায়। এতে মেয়ে বাধা দিলে তার উপর নির্যাতন চালান তার মা। এভাবে চলছিল অনেকদিন ধরে।

মেয়ের অভিযোগ, গত মঙ্গলবার তার মা ফোনে কোনো একজনের সঙ্গে কথা বলার সময় ঝগড়া শুরু করেন। মেয়ে বিষয়টি তার বাবাকে জানাবে বললে মা তাকে ও তার ভাইকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেয়। এক পর্যায়ে পায়ে হাতকড়া লাগিয়ে বটি দিয়ে কোপ দেন। এতে মেয়ের বাম হাতের কনুই কেটে যায়। এতে তার হাতে ১১টি সেলাই দিতে হয়েছে।

এর আগে ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকার সময় এ ধরনের অনৈতিক কাজে বাধা দিলে মেয়ে মা গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেন বলেও অভিযোগ করা হয়।

নড়িয়া থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে মেয়েটি পালিয়ে নড়িয়া থানায় এসে তার উপর চালানো নির্যাতনের বিবরণ দিয়ে মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মা আবার মেয়েটির পায়ে হাতকড়া লাগিয়ে নির্যাতন করতে থাকলে স্থানীয়রা নড়িয়া থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে মাকে আটক করে নড়িয়া থানায় নিয়ে আসে। এরপর নড়িয়া থানা পুলিশ তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশের এক জোড়া হাতকড়া উদ্ধার করে। শুক্রবার দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করে তিনদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয় বলে জানান ওসি ইকরাম।

এ ব্যাপারে মেয়েটি সাংবাদিকদের বলে, তার পা থেকে হ্যান্ডকাপ খুলে দিতে বললে এবং এই ঘটনা তার বাবাকে জানাতে চাইলে মা বটি দিয়ে বাম হাতে কোপ দিলে তার বাম হাতের কনুইর উপরের অংশে কোপ লাগে। এরপর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে বাসায় নিয়ে তাকে আটকে রাখেন।

“এর আগেও আমরা যখন ঢাকা থাকতাম তখন খুন্তি গরম করে আমার পায়ে ছ্যাঁকা দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এজন্য মাকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি।”

পুলিশের হাতকড়ার কথা জিজ্ঞেস করলে মেয়ে বলেন, “এটা দারোগা ফিরোজ আঙ্কেলের। সে যখন আমাদের বাসায় আসত তখন রেখে গিয়েছিল।”

নড়িয়া থানার সাবেক এসআই ফিরোজের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, “আমি তাদের পাশের বাসায় থাকতাম। তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না।”

হাতকড়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার সম্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য কেউ অপপ্রচার করছে।”

তিনি এ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিকে বলেন, “নিউজ লিখে কী হবে। আমার সাথে যোগাযোগ করুন।”

এসআই ফিরোজ বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানায় কর্মরত আছেন।

ওসি ইকরাম আলী মিয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে মেয়েটিকে নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই বাসা থেকে এক জোড়া হ্যান্ডকাপ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় অভিযোগটি আমলে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই থানায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।