বন্যায় নেত্রকোণায় ক্ষতিগ্রস্ত দেড়লাখ কৃষক

আগাম বন্যায় নেত্রকোণায় দেড়লাখের বেশি বোরো চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

লাভলু পাল চৌধুরী নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2017, 02:22 PM
Updated : 26 April 2017, 02:25 PM

ফসলহানির পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্ষতিগ্রস্ত বোরো চাষিদের জন্য জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে সাত কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক মুশফিকুর রহমান এ তথ্য জানান।

উজানের ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে এপ্রিলের শুরু থেকে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় হাওরসহ বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাজার হাজার কৃষক। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলায় ত্রাণ কাজ শুরু হয়েছে।

মুশফিকুর রহমান জানান, বরাদ্দের চার হাজার ৯০০ মেট্রিক টন চাল বুধবার এসেছে। এর পরপরই তা বণ্টনের কাজও শুরু হয়েছে। প্রতি মাসে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারে ৩০ কেজি চাল ও নগদ পাঁচশ টাকা করে বরাদ্দের এই সহায়তা আগামী একশ দিন দেওয়া হবে।

“বন্যায় হাওরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এক লাখ ৬৭ হাজার ১৮০ জন বোরো চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”

জেলা প্রশাসক জানান, নেত্রকোণায় আবাদ হওয়া এক লাখ ৮৪ হাজার ৩২০ হেক্টর জমির মধ্যে ৬৯ হাজার ৭১০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে, মরে গেছে এক হাজার ১৮০ মেট্রিক টন মাছ।

এর আগেও বন্যা শুরুর পরপর জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ৩৫৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২৫ লাখ টাকা ত্রাণ সহায়তা আসে, যা ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

নেত্রকোণা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল বলেন, মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নতুন করে আর বোরো ফসল তলানোর ঘটনা ঘটেনি। তবে অবার বৃষ্টি হলে ফসলহানির আশংকা থাকছেই।

ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফসল তলিয়ে নষ্ট হওয়ায় কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ পানির নিচ থেকে আধাপাকা ধান কাটছেন যতটুকুই পাওয়া যায় এই আশায়। আবার বেশিরভাগ কৃষকই এক ছটাক ধানও ঘরে তুলতে পারেননি। অনেকেই কাঁচা ধান কেটে আনছেন গো খাদ্যের জন্য।

হাওর উপজেলা মদনের কাইটাইল ইউনিয়নের বাড়রী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবুল আজাদ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাড়ির সামনে হাওরে এবার নিজের দুই একর জমিতে আবাদ করেছিলেন ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধান। এই জমিতে একটিই বোরো ফসল হয়। পানি থাকার কারণে এখানে রোপা আমন করা যায় না।

“এই একটা ফসল চলে গেল পানিতে। আশা করেছিলাম ২০০ মনের মতো ধান পাব। এক ছটাক ধানও ঘরে তুলতে পারিনি। সারা বছর খাবটা কী! সংসার চালাব কেমনে! আবাদের সময় কিছু ঋণ করেছিলাম। এই টাকাই কেমনে শোধ করব!”

কেন্দুয়া-মদন সড়কের পাশে কেন্দুয়া উপজেলার গোগ গ্রামের কৃষক রহিছ উদ্দিন আড়াই একরের মতো জমিতে আবাদ করেছিলেন।   

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৪০ থেকে ৫০ শতকের মতো জমির আধাপাকা ধান পানির নিচ থেকে কেটে আনার চেষ্টা করছি। সামান্য ধান পাচ্ছি। দশ ভাগের এক ভাগও পাব না। গরুর জন্য কাঁচা ধান কটে আনছি। গরুগুলোকে কেমনে বাঁচাব।”

তলিয়ে যাওয়া কাঁচা ধান কাটছিলেন মদন উপজেলার জয়পাশা গ্রামের কৃষক ইমান আলী বলেন, “গরুর জন্যে এই কাঁচা ধান কাটছি। কিছু আধাপাকা ধানও কেটেছি। তাতে এক মাসের খাবারও হবে না।”

উপজেলার হাজরাগাতি ও কেশজানি গ্রামের কয়েকজন কৃষকও একই কথা বলছেন।

জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত অনেক কৃষক ত্রাণ পাননি বলে অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, “পর্যাপ্ত লোকবল কাজ করছে। জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কোনো এলাকা ত্রাণ সহায়তা থেকে বাদ যাবে না। বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করেছি। আর ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম হলে সরকার জিরো টরারেন্স দেখাবে। অনিয়মকারী যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”