খেজুরের রস চুরির অভিযোগে গৃহবধূকে নির্যাতন

লক্ষ্মীপুরের খেজুরের রস চুরির অভিযোগে এক গৃহবধূর শাড়ি টেনে খুলে মারধরের পর সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2017, 11:44 AM
Updated : 6 March 2017, 11:45 AM

রামগঞ্জ থানার ওসি মো.তোতা জানান, রোববার রাতে ওই গৃহবধূ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।

তবে তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি ওসি।

গত ২ মার্চ রামগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের ফকিরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি।

স্থানীয়রা জানায়, নির্যাতনের শিকার ওই নারীর কয়েকটি খেজুর গাছ পাশের গ্রামের সলেমানকে বর্গা দেন।কিন্তু সলেমান ওই গৃহবধূকে খেজুরের রস দিচ্ছিলেন না। এ কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে নিজেই বর্গা দেওয়া একটি খেজুর গাছ থেকে রস নামাতে যান।

“এ সময় সোলেমান তার দলবল নিয়ে ওই গৃহবধূকে মারধর করে আটকে রাখে।”

পরে নারায়ণপুর গ্রামের মেম্বার মো.বিল্লাল, ফকিরপুরের মেম্বার খিজির আহম্মেদ ও নারায়ণপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম দুলুর উপস্থিতিতে সেখানে সালিশ বসিয়ে ওই গৃহবধূকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় বলে জানান তারা।

কিন্তু ওই নারী টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গ্রামবাসীর সামনে সলেমানের নেতৃত্বে স্থানীয় আহসান উল্লা, কাউনিয়া বাজারের আব্দুল মান্নান, এমরান, নারায়নপুরের আব্দুল রব, মো. লিটন, মো. স্বপনসহ অন্যরা তাকে মারধর করে তার পরনের কাপড় খুলে নির্যাতন চালায় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। 

একপর্যায়ে তারা ওই গৃহবধূর গোয়ালঘর থেকে একটি গরু লুট করে নিয়ে যায় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

বিডিনিউজ টোয়োন্টফোর ডটকমকে ওই গৃহবধূ বলেন, “সম্পত্তি নিয়ে আমার বাড়ির ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। আমাকে এলাকা ছাড়া করতে মেম্বার খিজির, বিল্লাল ও খোরশেদ পরিকল্পিতভাবে চোর বানিয়ে আমাকে মারধর ও শাড়ি খুলে নির্যাতন করে সেই ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়।”

তিনি বলেন, “এখন আমি লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারছি না। আতঙ্কে চারদিন ধরে ঘুমাতেও পারছি না।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোলেমান বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ওই নারীর পরনের কাপড় ধরে টেনে ধরা হলে তা খুলে যায়। এতে আমার দোষ নেই।”

“তার অপরাধের প্রমাণ রাখার জন্য এলাকাবাসীদের মধ্যে হয়তো কেউ ভিডিও করেছে। তবে কারা ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়েছে সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না।”

মেম্বার বিল্লাল হোসেন জানান, খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে যান। চুরির প্রমাণ পেয়ে ওই নারীকে কিছু টাকা জরিমানা করা হয়।

“টাকা না দিতে পারায় একটি গরু মেম্বার খিরিজের জিম্মায় রাখা হয়। টাকা দিলে গরু দিয়ে দেওয়া হবে।”

তবে ওই নারীর শাড়ি খুলে ভিডিও করার বিষয়ে কিছু জানেন না দাবি করে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে সলেমান ভালো বলতে পারবে।”

চণ্ডীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.কামাল হোসেন ভূইয়া বলেন, “মেম্বারের মুখে ঘটনাটি শুনেছি, বিস্তারিত বলতে পারবনা। ওই চোর মহিলা নাকি থানায় আবার মামলাও করেছে।”

মামলার বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মহসিন জানান, তদন্তের স্বার্থে এখন বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। মামলার এজাহারভুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে।