বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের শাস্তির প্রতিক্রিয়ায় এই মেডিকেলের পর আরও পাঁচটি হাসপাতালে কর্মবিরতিতে গেছেন তাদের সহকর্মীরা।
Published : 04 Mar 2017, 05:57 PM
এতে চিকিৎসক ‘সংকটে’ পড়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের এই ধর্মঘটকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলেছেন। অপরদিকে ঘটনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দুষছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ।
গত মাসে বগুড়া মেডিকেলে এক রোগীর স্বজনকে মারধর ও কান ধরে উঠ-বস করানোর ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ ঘটনা তদন্তের পর বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চার শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের শাস্তি ঘোষণা করলে ওইদিন দুপুরের পর থেকে হাসপাতালটিতে কাজ বন্ধ করে দেন তাদের সহকর্মীরা।
শনিবার দিনাজপুর, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সিরাজগঞ্জের নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও কর্মবিরতিতে যান।
সকালে বগুড়া মেডিকেল কলেজের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধনে চারজনের শাস্তি বাতিলসহ সাত দফা দাবি জানান শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা।
বিকালে চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ““এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের ইন্টার্ন, যাদের জন্য আমি ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছি। ১৫ হাজার টাকা করেছি।
“একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় রোগীর স্বজনরা আক্রান্ত হয়েছিল। তাদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আশা করি তারা ভুল বুঝতে পারবে, এর পুনরাবৃত্তি হবে না।”
তিনি বলেন, ““রোগীকে জিম্মি করে কেউ ধর্মঘট করুক সে ডাক্তার হোক, শ্রমিক হোক যে-ই হোক না কেন, এটা আমরা সমর্থন করি না।”
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনকে দায়ী করে বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, “চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা কমাতে অকারণে সুপরিকল্পিতভাবে চিকিৎসকদের হেনস্থা, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে হামলা এবংঅতিরঞ্জিতভাবে তা ফলাও করে খবর প্রচারের মাধ্যমে একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়।
“কথায় কথায় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অকারণ হুমকি ও মামলা মোকদ্দমায় আমরা বিব্রত।”
বগুড়া মেডিকেলের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “হাসপাতালে সংঘটিত ঘটনায় স্থানীয়ভাবে তদন্ত না করে হঠাৎ করে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অতি দ্রুত একটি তদন্ত কমিটির করিতকর্মা কর্মকর্তাগণের মাধ্যমে তদন্ত সম্পন্ন করে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যে শাস্তির বিষয়টি তদন্ত কমিটি গঠনের পূর্বেই চারিদিক বলা বলি হচ্ছিল।”
সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আলাউদ্দিন সরকার নামে এক রোগীর ছেলে ও দুই মেয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধরের শিকার হন।
ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পর ২ ফেব্রুয়ারি চার ইন্টার্ন চিকিৎসককে শাস্তির ঘোষণা আসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে। চারজনের ইন্টার্নশিপ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। ছয় মাস পরে তাদের চারজনকে অন্য চারটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করতে বলা হয়।
শাস্তিস্বরূপ এই কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি আল মামুনকে খুলনা মেডিকেল, নূরজাহান বিনতে ইসলাম নাজকে দিনাজপুর মেডিকেল, মো. আশিকুজ্জামান আসিফকে ফরিদপুর মেডিকেল ও কুতুবউদ্দিনকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শেষ করতে হবে।
৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতিতে দিনাজপুরের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা
সকাল ১০টায় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানববন্ধনে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরুর ঘোষণা দেন।
কর্মবিরতির কারণে হাসাপাতালের চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক রাখতে চিকিৎসকরা অতিরিক্ত সময় দিচ্ছেন বলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. শাহাদৎ হোসেন খন্দকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
খুলনায় কর্মবিরতি শুরু হয় দুপুরে
খুলনার ইন্টার্ন চিকিৎসকরা দুপুর থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রশাসন রোগী ও চিকিৎসককে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। এভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থা চালিয়ে নেওয়া কঠিন।
“এ কারণে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ধর্মঘট করতে বাধ্য হচ্ছেন।”
এদিকে ধর্মঘটের কারণে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ করেছেন রোগীরা।
মেডিসিন বিভাগের রোগী আব্দুর রহমান বলেন, বড় ডাক্তার রাউন্ড দিয়ে যাওয়ার পর আর কোনো ডাক্তারকে ডেকেও পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জানতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনন্দ মোহন সাহার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
নর্থ বেঙ্গল মেডিকেলে ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি
সিরাজগঞ্জের নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজে দুপুরে মান্ববন্ধনের পর কর্মবিরতি শুরু হয়।
বক্তারা বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, সে জন্য সরকার একপেশে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারই প্রতিবাদে তারা মাঠে নেমেছেন।
তারা বগুড়ার চার ইন্টার্ন চিকিৎসকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিতে আগামী ৭২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবেন। পরবর্তীতে কেন্দ্রের ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে মাঠে থাকবেন বলে তারা জানিয়েছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সকাল ৮টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা মানববন্ধন করে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের মুখপাত্র আবু রায়হান সাংবাদিকদের বলেন, বগুড়ার চার ইন্টার্ন চিকিৎসকের শাস্তি মওকুফ করে কর্মস্থলে বহালের দাবিতে ‘সারা দেশে’ ইন্টার্নদের যে কর্মবিরতির কমসূচি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে একাত্মতা প্রকাশ করা হয়েছে।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতিসহ হাসপাতালের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
রংপুর ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ফারহান রহমান বলেন, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের চার ইন্টার্ন চিকিৎসকের শাস্তি প্রত্যাহারসহ তাদের নিজেদের কর্মস্থলে বহাল রাখার দাবিতে তারা এই কর্মসূচি পালন করছেন।