ফরিদপুরে জমজমাট জসীম পল্লী মেলা

ফরিদপুরে জমে উঠেছে জসীম পল্লী মেলা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ লটারি কিনছে। লটারি ও হাউজির প্রতি দর্শকদের বেশি আকর্ষণ দেখা যাচ্ছে। ড্রয়ের সময় লটারি মঞ্চ ও আশপাশে উপচে পড়ছে ভিড়। সন্ধ্যার পর ভিড় জমে হাউজি সেন্টারেও।

ফরিদপুর প্রতিনিধিমফিজুর রহমান শিপন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2017, 05:30 AM
Updated : 8 Feb 2017, 12:01 PM

গত ১৩ জানুয়ারি থেকে জেলা সদরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নে পল্লিকবি জসীম উদদীনের বাড়ির কাছে কুমার নদের পাড়ে মেলা শুরু হয়। জসীম উদ্যানে মাসব্যাপী এই মেলা আয়োজন করেছে জসীম ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসন।

মেলা কমিটির সদস্য আইনজীবী জাহিদ ব্যাপারী জানান, মেলা উপলক্ষে মোট ১৬৯টি চারু ও কারুপণ্যের স্টল বসেছে।

দেখা গেছে, প্রতিদিনই সন্ধ্যা ৬টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেলার মাঠ সংলগ্ন জসীম মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। তবে মূল আকর্ষণ লটারি ও হাউজি। লটারির প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি।

মেলায় স্টল ঘুরে দেখছেন কবি জসীম উদদীনের মেয়ে আসমা এলাহী ও জামাতা তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী (যিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা)।

এবার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাগুরা জেলার কাটাখালী বাজারের জে জে এন্টারপ্রাইজকে।

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাইকসহ ভ্যান দিয়ে ১০ টাকা মূল্যের লটারি বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। রাত ১০টার পর মেলার মঠে প্রতিদিনের বিক্রি হওয়া টিকিটের ওপর অনুষ্ঠিত হচ্ছে ড্র।

প্রতিদিন মোট ৭১টি পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।

জে জে এন্টারপ্রাইজের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, লটারির প্রথম পুরস্কার হিসেবে কোনো দিন প্রাইভেট কার, কোনো দিন মোটরসাইকেল, সোনার চেন বা কানের দুল দেওয়া হচ্ছে। একদিনে সর্বাধিক ২০টি মোটরসাইকেল পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।

মোটরসাইকেল পেয়েছেন এমন একজন হলেন কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের পশ্চিম গঙ্গাবতী গ্রামের আজাদ শেখ।

অটোরিকশাচালক আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটা টিকিট কিনে একটা মোটরসাইকেল পাইছি। আর কেনব না।”

একই গ্রামের কৃষক শামিম ঘরামি তিনটি টিকেট কিনে একটিতে মোটরসাইকেল পেয়ে উচ্ছ্বসিত।

তিনি বলেন, “যদি লাইগ্যা যায়। সত্যিই লাইগ্যা গেছে।”

শুরু থেকেই লটারির ড্র অনুষ্ঠান স্থানীয় ক্যাবল চ্যানেলে সরাসরি সস্প্রচার করা হত। বুধবার থেকে প্রশাসন সরাসরি সস্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ায় টিকিট বিক্রি গত কদিনে কিছুটা কমে গেছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।

১৯৯১ সাল থেকে এ জায়গায় এ মেলা হয়ে আসছে। শুরুতে ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ মেলা আয়োজন করত। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এলে মেলার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বেড়ে যায়। পরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত জসীম ফাউন্ডেশন মেলার দায়িত্ব নেয়।

অন্য বছর স্থানীয়রা মেলা আয়োজন করলেও এবার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাগুরা জেলার কাটাখালী বাজারের জে জে এন্টারপ্রাইজকে।

এন্টারপ্রাইজটির পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “মেলা পরিচালনার জন্য জসীম ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে হাউজি ও লটারির বিষয়ও রয়েছে।

“আমি স্বচ্ছতাপূর্ণ কাজে বিশ্বাসী। এজন্য লিখিত নির্দেশনা ছাড়া কোনো কাজ করি না। স্বচ্ছতার জন্যই লটারির ড্র অনুষ্ঠান স্থানীয় ক্যাবল নেটওয়ার্কে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন সেটি বন্ধ করে দিয়েছে কেন জানি না।”

মেলা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দোচ্ছ্বাস থাকলে কেউ কেউ বিভিন্ন বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

কবি জসীম উদদীনের মেয়ে আসমা এলাহী চৌধুরী মেলা দেখতে এসে সাংবাদিকদের বলেন, “পল্লীকবির নামে যে ধরনের মেলা হওয়ার কথা ছিল আমরা এখন সেটি দেখছি না।

“এই মেলার মধ্যে আমাদের দেশের গ্রামের আরও অনেক কিছু তুলে ধরার দরকার ছিল। আয়োজকরা সেটি করেননি।”

ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য অধ্যাপক আলতাফ হোসেন বলেন, মেলাটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালনা করায় সেই প্রাণের ছোঁয়া পাওয়া যায়নি।

“মেলাটি যে আমাদের এ বোধ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এ মেলায় অতীতে কখনও লটারি বা হাউজি ছিল না। অতীতে গোপনে গোপনে কেউ এ চেষ্টা করলেও প্রশাসন তা কঠোর হাতে দমন করেছে। এবার যা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে প্রশাসন একে বৈধতা দিয়েছে।”

জসীম ফাউন্ডেশনের সভাপতি ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মেলা পরিচালনা করা হচ্ছে। সেখানে লটারির বিষয়টিও আছে। শুরু থেকেই মেলাটি ভালোভাবে চলছে। লটারির বিষয়টি সুশীল সমাজ ভালোভাবে না নেওয়ায় আগামীতে বিষয়টি খেয়াল রাখা হবে।”