শামীম শিকদার (৩৫) নামে স্পেন প্রবাসী ওই ব্যক্তি সম্প্রতি ছুটিতে বাড়ি আসেন। তিনি শরীয়তপুর শহরের তুলাসার মহল্লার খালেক শিকদারের ছেলে।
শামীমের বড় ভাই স্কুলশিক্ষক খলিলুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে শরীয়তপুর সিভিল সার্জন অফিসের সামনে আইনজীবী পারভেজ রহমান জনকে বহনকারী অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয় একটি মোটরসাইকেল।
“মোটরসাইকেল আরোহী সাধারণ পোশাকের তিন ব্যক্তি নিজেদের র্যাব সদস্য বলে পরিচয় দেন। তাদের সঙ্গে প্রথমে অটোরিকশা চালকের কথা কাটাকাটি হয়। পরে আইনজীবী পারভেজও তর্কে জড়ান। এ সময় র্যাব সদস্যরা পারভেজকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় পারভেজের পরিচিত হিসেবে শামীম এর প্রতিবাদ করে। এরপর সন্ধ্যার দিকে শামীম নিখোঁজ হয়।”
এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে র্যাব-৮ এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শরীয়তপুরের পালং থানা এলাকা থেকে শামীম শিকদার নামে একজনকে ‘জাল টাকা ও ইয়াবাসহ’ আটক করার কথা বলা হয়।
শামীমের ভাই খলিল বলেন, “রাত দেড়টার দিকে মাদারীপুর র্যাব-৮ কার্যালয়ে গিয়ে শামীমকে আটক দেখতে পাই। তাকে বেদম মারধর করেও ক্ষান্ত হয়নি তারা। তাকে তুলে নিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে।
“আমার ভাই একজন নিরীহ মানুষ। সে ইউরোপে থাকে। সে কখনোই ইয়াবা বা জাল টাকার ব্যবসার সাথে জড়িত নয়। আমি এ নির্যাতনের বিচার দাবি করছি।”
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসার আগে ও পরে দুই রকম কথা বলেন র্যাব-৮ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর সোহেল রানা।
তিনি প্রথমে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে শরীয়তপুর শহরে শামীম শিকদার নামে এক লোক র্যাবের পরিচয় পাওয়ার পরও র্যাব সদস্যদের ‘গায়ে হাত তোলেন’।
“বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন মহলে জানাজানি হয়। পরে র্যাবের কয়েকটি দল শরীয়তপুর শহরে মুভ করে। কিন্তু মাদারীপুর ক্যাম্পের র্যাব সদস্যরা তাকে আটক করেনি।”
শামীমকে আটকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সোহেল রানা বলেন, “জাল টাকা ও ইয়াবাসহ শামীম শিকদার নামে এক যুবককে বৃহস্পতিবার পালং থানা এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে।”
রাজগঞ্জ সেতু এলাকা থেকে এক যুবককে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীও ওই টেলিভিশনকে বলেন।
এদিকে শামীমের খোঁজ না পেয়ে আইনজীবী পারভেজ রাতে পালং মডেল থানায় জিডি করেন।
পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাকে বহনকারী অটোরিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় সাদা পোশাকে থাকা তিন র্যাব সদস্যের এক মোটরসাইকেল। এ নিয়ে আমার সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হলে শামীম এর প্রতিবাদ করেন। সেখানে হাতাহাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি সেখানেই মীমাংসা হয়ে যায়।”
পরে শামীমকে কোথাও খুঁজে না পাওয়ায় থানায় জিডি করেন বলে জানান পারভেজ।
পালং মডেল থানার ওসি মো. খলিলুর রহমান বলেন, “আমি জানতে পারি বৃহস্পতিবার বিকালে শামীম শিকদার নামে একজনকে সাদা পোশাকধারী লোকেরা রাজগঞ্জ ব্রিজ এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে র্যাব তাকে আটক করে বলে জানতে পারি।”
ওসি বলেন, শুক্রবার ভোর ৫টার সময় শামীম শিকদারকে জাল টাকা ও ইয়াবা বহন এবং সরকারি কর্মচারীদের গায়ে হাত তোলার একটি মামলা দিয়ে থানায় সোপর্দ করে র্যাব। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে।
খলিল জানান, শামীম ২০০১ সালে কাজের জন্য স্পেনে যান, মাঝে মাঝে দেশে আসেন। এবার ছুটিতে বাড়ি আসেন গত ৬ ডিসেম্বর। আগামী ২৫ এপ্রিল আবার তার স্পেনে ফেরার কথা।