বুধবার সকালে কারখানায় এসে নোটিস দেখে ফিরে গেছেন বন্ধ কারখানাগুলোর অনেক কর্মী। তারা যেন সড়কে জটলা না করেন, সেজন্য মাইকিং করছে পুলিশ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকার আশুলিয়ায় ১৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ বাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসিন রেজা।
আশুলিয়া থানার ওসি মহসিনুল কাদির বলেন, “বিজিবি সড়কে টহল দিচ্ছে। কোথাও শ্রমিকরা জটলা করার চেষ্টা করলে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
বেতন বৃদ্ধি, ঘরভাড়া না বাড়ানো, ‘কথায় কথায়’ ছাঁটাই না করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের জামগড়া, বেরন, বাইপাইল, নরসিংহপুরসহ আশপাশে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা এক সপ্তাহর বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।
তাদের ওই দাবি ‘অযৌক্তিক’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
৫৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিজিএমইএ বলেছে, কাজে না ফিরলে বেতন পাবে না এসব কারখানার শ্রমিকরা।
এর আগে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকরা কাজে না ফিরলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইপাইল থেকে জিরাব পর্যন্ত বুধবার সকাল থেকে বিজিবিসহ থানা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও আর্মড পুলিশ টহল দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর মহড়া দিচ্ছে পুলিশের রায়ট কার।
সরজমিনে দেখা গেছে, পুলিশের পিকআপ ভ্যানে মাইক লাগিয়ে বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের মিছিল-মিটিং থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। মিছিল-মিটিংয়ের চেষ্টা করলে ‘আইনানুগ ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথাও বলা হয় মাইকে।
এদিকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলেও সকালে অনেক শ্রমিককেই হাতে খাবারের বাটি নিয়ে কারখানায় যেতে দেখা গেছে। পরে তারা বন্ধের নোটিশ দেখে ফিরে যান।
ওসি মহসিনুল কাদির বলেন, যেসব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি সেখানে স্বাভাবিকভাবে কাজ চলছে।
“মঙ্গলবার আমরা মাইকিং করে বুধবার থেকে কাজে যোগদানের আহ্বান জানাই। এরপর মালিকপক্ষ বিজিএমইএ অনিদির্ষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় বসার ব্যবস্থা করছি।”
সর্বনিম্ন বেতন ৫ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৬ হাজার টাকা করার পাশাপাশি বিভিন্ন দাবিতে নয় দিন আগে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকরা।
তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে- কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দুপুরে খাবার ও যাতায়াত ভাতা বৃদ্ধি, ছুটির দিনের কাজের ওভার টাইম বিল দ্বিগুণ করা, যখন-তখন শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা, কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু হলে চাকরির বয়স পর্যন্ত আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ, তাজরিনসহ সব কারখানায় দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা, শিল্পাঞ্চলে সরকারি স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ এবং নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া।