নাড়ির টানে জন্মভূমিতে ফিরে এলেন সৈয়দ শামসুল হক। শায়িত হলেন প্রিয় মাটির কোলে। তার প্রিয় জলেশ্বরীর বুকে।
Published : 28 Sep 2016, 09:59 PM
সেখানে নামাজে জানাজার পর লেখকের ইচ্ছানুযায়ী কলেজ মাঠের শেষ প্রান্তে তাকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, কবিপত্নী আনোয়ারা সৈয়দ হক, একমাত্র ছেলে তুর্জসহ স্বজনরা হেলিকপ্টারে করে মরদেহ নিয়ে কলেজ মাঠে নামেন। মরদেহ রাখার পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পুস্পমাল্য অপর্ণ করা হয়।
এরপর প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, সাংস্কৃতিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো পুস্পমাল্য অর্পণ করে।
রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, নীলফামারী জেলার শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী ও সাহিত্যপ্রেমীরা কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
জানাজায় আসা স্বজন, বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী, ভক্তসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠেন। এদের মধ্যে কেউ ছিলেন তার একই স্কুলের ছাত্র, কেউ তার গুণমুগ্ধ ভক্ত, কেউ তার লেখায় অনুপ্রাণিত।
কবির একমাত্র ছেলে তুর্জ জানাজার আগে বলেন, জলেশ্বরীর কোলে আজ ফিরিয়ে আনা হয়েছে জলেশ্বরীর ছেলেকে। হৃদয়ের কাছে, ভালবাসার কাছে, প্রিয় জন্মভুমির কাছে। আমি গর্বিত এত মানুষের ভালোবাসা দেখে।
কুড়িগ্রাম সবুজপাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ হকের ছোট ভাইয়ের সহপাঠী সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আবুল ফজল মন্ডল জানান, “সৈয়দ হক আমাদের সাথে একই স্কুলে পড়েছেন। তাদের বাড়ি আমি প্রায়ই যেতাম। আমরা ১৯৫৪ সালে এইচ ই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করি। এরপর তিনি ঢাকা চলে যান।”
কুড়িগ্রামের প্রবীণ সাংবাদিক ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি একেএম সামিউল হক নান্টু বলেন, সৈয়দ হক আর আমি কুড়িগ্রাম রিভারভিউ স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলাম। আমি ছিলাম ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে, আর উনি ছিলেন ৯ম শ্রেণিতে। ভীষণ দুরন্ত ছিলেন সৈয়দ হক। তার বাবার ছিল হোমিওপ্যাথিক দোকান। শহরের জাহাজমোড়ে তার মায়ের নামে ছিল নুরজাহান মেডিকেল হল।
“তার বাবার ইচ্ছা ছিল সৈয়দ হক ডাক্তার হোন। কিন্তু মেট্রিক পাশ করে তিনি পালিয়ে মুম্বাই চলে যান সিনেমা জগতে কাজ করতে।”
শোকসভা
সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে তার প্রিয় রিভারভিউ স্কুলে বুধবার সকালে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেইসাথে স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আহাম্মেদ, শিক্ষক মো. ফয়েজ উদ্দিন, মো. সাহাদত হোসেন এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শতবষ উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক সফি খান।
সভায় মহিউদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, সৈয়দ শামসুল হক এ বিদ্যালয়ের ছাত্র হওযায় আমরা সবাই গৌরবান্বিত। তার পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তিনি গত বছর এ বিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে বিদ্যালয়ের মাটি নিয়ে কপালে ছোঁয়ান। এতেই বোঝা গেছে কুড়িগ্রামের প্রতি ও স্কুলের প্রতি তার ভালবাসা।
বিদ্যালয়টির প্রাক্তন ছাত্র সফি খান বলেন, কুড়িগ্রামের ছেলে হয়েও দীর্ঘদিন তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়নি। সেই তাগিদ থেকে ২০১১ সালের ১ মার্চ তাকে কুড়িগ্রাম পৌরসভা মাঠে সংবর্ধনা দেই। সেই সময় তিনি বলেছিলেন- ‘আমার মৃত্যুর পর কুড়িগ্রামের মাটিতে শায়িত হতে চাই।’
“পরে চলতি বছর কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের এক অনুষ্ঠানে এসে কুড়িগ্রামের মাটিতে শায়িত হতে দ্বিয়ীয়বারের মতো ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ওইদিন তিনি কলেজের মাঠ সংলগ্ন ধান ক্ষেত দেখে তার পছন্দের কথা জানান।”
জাফর আলী জানান, এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুমতি চেয়ে পত্র পাঠায়। সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর আবার প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রাম সফরে এসে এ খবর জানতে পেরে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।