রাজশাহীতে নিজের বাড়ির কাছে খুন হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে তার সহকর্মী ও ছাত্ররা চিনতেন অধ্যাপনা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মেতে থাকা একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে।
Published : 24 Apr 2016, 11:12 AM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিমের পৈত্রিক বাড়ি বাগমারার দরগাবাড়ি এলাকায়। নগরীর শালবাগানের সপুরা এলাকায় থাকতেন তিনি।
তার ভাই সাজিদুল করিম জানান, ‘কোমলগান্ধার’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন রেজাউল। ছিলেন ‘সুন্দরম’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা।
‘সুন্দরম’ এর সভাপতি হাসান রাজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্যার খুব ভালো সেতার বাজাতেন। তিনি শালবাগানে একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন।”
৬১ বছর বয়সী অধ্যাপক রেজাউল নিজেও কোমলগান্ধারে লিখতেন; যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববাংলা নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনেও যুক্ত ছিলেন অধ্যাপক রেজাউল।
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তমশ্রী দাশ, যিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, বিডিনিউজ টোয়োন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্যারের যে একজন শত্রু থাকতে পারে, তা ভাবাই যায় না। ডিপার্টমেন্টে উনি ছিলেন সবার কাছের মানুষ।”
ইংরেজি বিভাগের সভাপতি ড.এ এফ এম মাসউদ আখতার বলেন, “অধ্যাপক সিদ্দিকী যে ধরনের লেখালেখি করতেন, তাতে কোনো ধর্মকে হেয় করার মতো বিষয় ছিল না। আর ব্লগিং করতে যে ধরনের কম্পিউটার জ্ঞান দরকার হয় তাও অধ্যাপক সিদ্দিকীর ছিল না। ফলে ধর্মবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যে তিনি জড়িত, সেটা আমরা মনে করি না।”
অধ্যাপক সিদ্দিকী কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারীও ছিলেন না, বলেন তার সহকর্মী।
অধ্যাপক রেজাউল শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন না বলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মু. শহীদুল্লাহ জানান।
শহীদুল্লাহ ছাত্রজীবনে ছিলেন রেজাউলের সহপাঠী। ইংরেজি বিভাগে তাদের শিক্ষকতার শুরুও একইসঙ্গে।
“রেজাউল নিরীহ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। কোনো ঝঞ্ঝাটে যেতেন না, বিভাগের কালচারাল প্রোগ্রাম তো তিনিই করতেন,” বলেন শহীদুল্লাহ।
সহকর্মীরা জানিয়েছেন, রেজাউল করিম ছিলেন প্রগতিশীল মনের মানুষ, কোনো গোঁড়ামি তার ছিল না। আবার গোঁড়ামির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন- এমনও নয়।
১৯৫৫ সালের জানুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করা এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী ইংরেজি সাহিত্যে লেখাপড়া করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই। স্নাতকোত্তর শেষ করার পর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে তার শিক্ষকতার শুরু।
প্রভাষক হিসেবে তিনি নিজের সাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরেন ১৯৮৩ সালে; অধ্যাপক হন ২০০৬ সালে। দুই দফা বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
তার ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। মেয়ে রেজোয়ানা হাসিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী।
শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এই শিক্ষককে। মোটর সাইকেলে আসা দুই যুবক তাকে কুপিয়ে পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে জানিয়ে পুলিশ।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এ হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী এক ওয়েবসাইটে খবর এসেছে। জঙ্গি গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতার সন্দেহের কথা বলছেন রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিনও।
নিহত অধ্যাপকের ছেলে বোয়ালিয়া থানায় যে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন, তাতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করেছেন তিনি।