বার্লিনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র  বিরোধী আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন।

রাশা বিনতে মহিউদ্দিন, জার্মানি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2017, 04:17 AM
Updated : 21 August 2017, 04:17 AM

বার্লিন শহরের গণতান্ত্রিক ও মানবধিকার কেন্দ্রে শনিবার থেকে দুই দিনব্যাপী চলা এ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’র ইউরোপীয় নেটওয়ার্ক।

সম্মেলনে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করে সুন্দরবন বাঁচাতে ‘বার্লিন ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা হয়।

এ ঘোষণাপত্রে সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের কারণে অদূর ভবিষ্যতে সুন্দরবনের সম্ভাব্য ক্ষতি, এশিয়া ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের উদাহরণ গ্রহণ করে পরিবেশবান্ধব জ্বালানীর জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণসহ বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রকল্পগুলো বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। 

রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন বাঁচাবার দাবি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহারকে প্রাধান্য দিয়ে সুলভ মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সহায়ক নীতি প্রণয়নের দাবি জানায় আয়োজক সংগঠনটি।

এ সম্মেলনে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। এ
ছা
ড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, গবেষক ও পেশাজীবীরাও সম্মেলনে অংশ নিয়ে তাদের মতামত দেন।

রামপাল প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব ও বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্যতা নিয়ে চারটি সেশনে সর্বমোট আটটি প্রবন্ধ পাঠ করা হয়।

‘বিশ্বসম্পদ’ বলে অভিহিত করে সুন্দরবনকে রক্ষার দাবি জানিয়ে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক ভিলফ্রেড এন্ডলিশার ।

বাংলাদেশে বিকল্প জ্বালানী ব্যবহারের সুযোগ আছে- এ মর্মে যুক্তি তুলে ধরেন অধ্যাপক হার্টমুট বেরভোল্ফ ।

‘তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’র  সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশের তেল ও গ্যাস সম্পদ নিয়ে বিগত সময়গুলোতে বিভিন্ন সরকারের গাফিলতির কারণে দেশিয় জ্বালানী সম্পদ ও পরিবেশের ক্ষতির বর্ণনা দেন।

নবায়নযোগ্য জ্বালানী বিশেষজ্ঞ মাহবুব সুমন বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর প্রায়োগিক সাম্ভাব্যতা ও নীতিগত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।

সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেন জ্বালানী বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ জো এথিয়েলি, ভারতের বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সেক্টরে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জ্বালানী বিশেষজ্ঞ শংকর শর্মা এবং ‘ভারত জন বিজ্ঞান আন্দোলন’-এর প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য দত্ত।

জ্বালানী বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ জো এথেয়েলি জ্বালানী খাতে বিনিয়োগে ব্যাংকিং সেক্টরের বর্তমান ও সাম্ভাব্য ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করেন।

জ্বালানী বিশেষজ্ঞ শংকর শর্মা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার সীমা ও পরিবেশগত ঝুঁকির পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।

বিজ্ঞানী সৌম্য দত্ত তার আলোচনায় ডিস্ট্রিবিউটিভ সিস্টেমে সুলভ মূল্যে সৌর-বায়ু ও বায়োগ্যাস ব্যবহারের স্থানীয় ও আঞ্চলিক সুবিধার নানা দিক নিয়ে মত প্রকাশ করেন।

বার্লিনে রামপাল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বার্লিন ঘোষণাপত্রে পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য বিষয়ক সংগঠন গ্রিনপিস, ফ্রেন্ডস অব দ্যা আর্থ. ৩৫০.অর্গ,  ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফাউন্ডেশন, উইমেন এনগেজ ফর দ্যা কমন ফিউচার, ব্যাঙ্কট্রাকসহ সারা বিশ্বের প্রায় একশ’ সংগঠন স্বাক্ষর দিয়ে সংহতি জানিয়েছে।

সম্মেলনে ‘তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’র ইউরোপীয় নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে সৈয়দ বাবুল ও মোস্তফা ফারুক শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশে চলমান রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার বিষয় নিয়ে যে আলোচনা ও আন্দোলন চলেছে, তার ব্যাপকতা ছড়িয়ে দিতেই এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।”

বার্লিন সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে ‘রামপাল  বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সুন্দরবনে পরিবেশগত প্রভাব’ শীর্ষক আলোচনাতে প্রবন্ধ পাঠ করেন গ্রিনপিসের কেসটিন ডোরেনব্রুক, বার্লিন বয়েথ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গুডরুন কামাস ও পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিক ক্যাথারিনা ফিঙ্কে। অধিবেশনটি পরিচালনা করেন পটসডাম জার্মান জিওসাইন্স গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক অনিমেষ গাইন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘কয়লা নির্ভর জ্বালানী নীতি, জলবায়ুতে তার প্রভাব এবং সবুজ জ্বালানী নীতিতে রূপান্তর’ বিষয়ক অধিবেশনে বক্তব্য দেন বার্লিন হুমবল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিলফ্রেড এন্ডলিশার, কোলন প্রযুক্তি কলা ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হার্টমুট বেরভোল্ফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও জার্মান পরিবেশ ফোরামের এলিজাবেথ স্টাউড। অধিবেশনটি পরিচালনা করেন বার্লিন হুমবল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষক ওয়াহেদ চৌধুরী।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘বাংলাদেশের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানীর সম্ভবনা ও সম্ভ্যবতা’ শীর্ষক তৃতীয় অধিবেশনে বক্তব্য দেন হ্যানোভারের লাইবনিজ ফলিত ভূ-পদার্থবিদ্যা ইনস্টিটিউটের গবেষক মোহম্মদ আজিজুর রহমান ও নবায়নযোগ্য জ্বালানী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাহবুব সুমন। অধিবেশনটি পরিচালনা করেন বার্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তানজিয়া ইসলাম।

সম্মেলনের চতুর্থ অধিবেশনে সুন্দরবন অঞ্চলে  রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল ও বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর সম্ভাব্যতা নিয়ে আন্দোলন ও সংহতি প্রকাশের লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্য মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পর্বটি পরিচালনা করেন ড্রেসডেন হেল্মহোলজ গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক দেবাশীষ সরকার।

সম্মেলন চলাকালে সুন্দরবনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী করেন ফটো সাংবাদিক ডেভিড ওয়েন। এছাড়া সুন্দরবন ও তার পরিবেশ বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও ছিলো সম্মেলনে।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!