স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ব্রাসেলস প্রেসক্লাবে ‘ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ)’ এ সেমিনারের আয়োজন করে।
‘এগেইনস্ট ভায়োলেন্স এক্সট্রিমিজম অ্যান্ড টেররিজম ইন ইউরোপ অ্যান্ড বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন ইবিএফ-এর আনসার আহমেদ উল্লা।
সেমিনারে প্রধান বক্তার বক্তব্যে কনফ্লিক্ট ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের ডিরেক্টর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ বলেন, “বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধে উগ্রবাদীদের অপব্যাখ্যা দায়ী।”
তিনি বলেন, “এদের অপব্যাখ্যার কারণে বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের বিস্তার ঘটছে। ইসলামিস্টরা বিভিন্ন ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে সমাজে অপব্যাখা দিয়ে যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করছে। আর এসব যারা করছে এরা হলো জিহাদী, ওহাবী এবং মউদুদীবাদের অনুসারী।”
আলোচনায় আরও অংশ নেন ইউকে কনজারভেটিভ দলীয় মেম্বার অব ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট জেফরি ভেন ওরডেন, ইতালিয়ান সোস্যাল ডেমোক্রেট দলীয় এমপি ব্রানদো বেনিফি, লেবার দলীয় সাবেক ডাচ এমপি অ্যামা আশান্তি ও সোসালিস্ট পার্টির হ্যারি ভ্যান ভোমের্ল।
জাফরি ভ্যান অরডেন এমইপি বলেন, “সাউথ এশিয়ান দেশগুলোতে উগ্রবাদীদের উত্থান ঘটেছে এবং ঘটছে। আর এর বিস্তৃতি ঘটছে এখন বৃটেন সহ সমগ্র ইউরোপে। সন্ত্রাস নির্মূল করতে হলে বৃটেনসহ ইউরোপের দেশগুলোকে সাউথ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক আরও জোরদার এবং কাউন্টার টেররিজম প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”
জাফরি ভ্যান বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, “যারা এখানকার মুসলিম তরুণ-তরুণীদের সিরিয়া, ইরাক গিয়ে আইএস বাহিনীতে অংশ নিতে উৎসাহিত করছে, এরা তো এই বৃটেন এবং ইউরোপ থেকে কাজ করছে। তাদের শেকড় খুঁজে বের করতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারত থেকে আগত অভিবাসীদের তাদের সন্তানদের ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে।”
সাবেক ডাচ এমপি আশান্তি বলেন, “বাংলাদেশি কমিউনিটি ইউরোপে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার এবং তাদের পরিচিতি সংকটে ভুগছে। আর এই সুযোগে একটি গোষ্ঠী এদের ধর্মের নামে উগ্রবাদের দিকে ধাবিত করছে।”
তিনি বলেন, “বৃটেন ও ইউরোপে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের ইসলামপন্থী দলগুলোর শাখা রয়েছে।”
সেমিনারে বাংলাদেশে একের পর এক মুক্তমনা ও ব্লগারদের হত্যার জন্যে ইসলামপন্থীদের ইঙ্গিত করে জাফরি ভ্যান বলেন, “এ ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।”
বাংলাদেশের মুক্তমনা লেখক, ব্লগার ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে আরও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সেমিনারে মুক্তমনা লেখকদের হত্যার বিচার ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হয়।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন হিউম্যানিস্ট ফেডারেশনের জুলি ফার্নেট, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সের অধ্যাপক চেতন ভাট, কাউন্টার এক্সট্রিমিজম প্রজেক্টের রবাটা ব্যানার্জি, রয়েল ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনের টমাস রেনার্ড।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে আনসার আহমদ উল্লাহ সন্ত্রাস নির্মূলে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, “জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী।”
তিনি বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও তাদের বিচারের সম্মুখীন করায় সরকারের প্রশংসা করেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন ‘ইউকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র পুষ্পিতা গুপ্তা, ন্যাদারল্যান্ডের দি হেগের এসটিড ফেরি, বেলজিয়ামের এরিক ডামিনেস মেনগুইয়াম, আহমদিয়া মুসলিম জামাত নেদারল্যান্ডসের কাওছার আহমদ।
ব্রাসেলসে ‘ঢাকা সলিডারিটি ফর পিস কমিটি’র কো-অর্ডিনেটর এমএম মোর্শেদের ধন্যবাদ বক্তব্যের মাধ্যমে সেমিনার শেষ হয়।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |