সুদান বসে নেপাল ভ্রমণের স্মৃতিচারণ : মাউন্ট কিনেয়িতি থেকে মাউন্ট এভারেস্ট

‘মাউন্ট কিনেয়িতি’ দক্ষিণ সুদানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এর অবস্থান প্রতিবেশি দেশ উগান্ডা সীমান্তের কাছাকাছি, উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ১৮৭ মিটার। অন্যদিকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা ‘মাউন্ট এভারেস্ট’ এবং এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার।

আনোয়ার সাত্তার, দক্ষিণ সুদান থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2017, 12:20 PM
Updated : 3 March 2017, 11:08 AM

দক্ষিণ সুদান থেকে বাংলাদেশ হয়ে নেপাল

১০ নভেম্বর, ২০১৬ সাল। দুপুর ১২টায় দক্ষিণ সুদানের বোর শহরের ইউএন কম্পাউন্ড থেকে তুরস্কের সহকর্মী আহমেত বোর এয়ারপোর্টে আমাকে নামিয়ে দিল। ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে ছিলাম। লম্বা যাত্রা শেষে কখন দেশে পৌঁছব।

হেলিকপ্টারে বোর থেকে ১৯৭ কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিণ সুদানের রাজধানী জুবায় ৪৫ মিনিটে পৌঁছলাম। রাতটা জুবা ইউএন কম্পাউন্ডের ট্রানজিট ক্যাম্পে কাটালাম। অপেক্ষার অনেক লম্বা একটি রাত পার করে সূর্য ওঠার আগেই বিছানা ছাড়লাম। ফ্রেশ হয়ে জুবা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম ১১ নভেম্বর সকাল ৭টার আগেই।

সকাল ১০টায় ইউএন ফ্লাইটে রওনা দিয়ে সোয়া ১১টায় কেনিয়ার নাইরোবি জোমো কেনিয়াতা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম। যাত্রার এই পর্যায় পর্যন্ত ইউএন-এর ব্যবস্থাপনায় বিনা খরচে আসলাম। কেনিয়ার নাইরোবি থেকে দেশে যাওয়ার খরচ আমার নিজের।

নাইরোবি থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, সেখানে কয়েক ঘণ্টার যাত্রা বিরতি শেষে কানেক্টিং ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছলাম পরদিন ১২ নভেম্বর সকাল ৮টায়। ২৪ দিনের ছুটি। আসা যাওয়ার চারদিন বাদ দিলে দেশে থাকা যাবে ২০ দিন। ডিসেম্বরের ৩ তারিখ, ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ছুটির শেষ দিন ডিসেম্বরের ৪ তারিখ আমাকে জুবায় পৌঁছতে হবে।

নেপাল যাত্রা

১৫ নভেম্বর, ২০১৬। দেশে পৌঁছার দুই দিন পর দুপুর ১২টায় আমার স্ত্রী নীপা, ১০ বছরের মেয়ে প্রিয়ন্তী আর সাড়ে চার বছরের ছেলে রিশান- আমরা চারজন রওনা দিলাম ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।

এই প্রথম পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে ভ্রমণে যাচ্ছি, গন্তব্য হিমালয় কন্যা নেপাল। নীপা, প্রিয়ন্তী, রিশান- সবাই খুব উত্তেজিত, তাদের দেখে আমিও।

 এক ঘণ্টা দেরিতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ছাড়ল বিকাল ৪টায়। প্রায় ঘণ্টাখানেক যাত্রার পর মাইক্রোফোনে ক্যাপ্টেনের গলা ভেসে এল। নিচে দেখা যাচ্ছে হিমালয় পর্বতমালা! ছবি তোলার প্রাণান্ত চেষ্টা সবার। সোয়া এক ঘণ্টার বিমান যাত্রা শেষে বিকাল সোয়া ৫টায় পৌঁছলাম কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে।

কাঠমান্ডুর শীতে কাবু

বাংলাদেশিদের জন্য কোন ফি ছাড়াই অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হয়। একমাসের ভিসা দিল নেপাল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে ঘণ্টাখানেক লেগে গেল। এয়ারপোর্টের বাইরে আমার নাম লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়ানো ছিল ড্রাইভার সুমন থাপা। এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকার মত ট্রাফিক জ্যাম পার হয়ে সোয়া এক ঘণ্টা পর কাঠমান্ডুর থামেল পৌঁছলাম। ট্যুরিস্টরা সাধারণত কাঠমান্ডুর থামেলেই থাকেন।

 কাঠমান্ডু এয়ারপোর্টে পৌঁছেই ব্যাগ থেকে শীতের জামা বের করতে হয়েছে। খুব ঠাণ্ডা লাগছিল। মোবাইল ফোনের ওয়েদার অ্যাপস জানাচ্ছিল তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু অনুভূত হচ্ছিল আরও বেশি। দেশে ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে যেমন অনুভূত হয়, তেমন। হতে পারে আমরা হঠাৎ ঢাকার নভেম্বরের গরম থেকে আসায় এমন অনুভূতি হচ্ছিল।

থামেলের তিব্বত গেস্ট হাউজে গিয়ে উঠলাম। সেখানে আমাদের ট্যুর অপারেটর কিরণ পাউডেল আমাদের স্বাগত জানাল। তিন তারকা মানের গেস্ট হাউজটা বেশ পছন্দ হল।

কিরণ পাউডেলের অফিস কাছেই। বৌ-বাচ্চাদের রুমে পৌঁছে দিয়ে আমি গেলাম তার অফিসে বিস্তারিত ভ্রমণ সূচি বুঝে নেওয়ার জন্য। পাঁচ রাত ছয় দিনের কাঠমান্ডু-পোখারা-কাঠমান্ডু-নাগরকোট ভ্রমণের জন্য আমাদের চারজনের জন্য তাকে দিতে হল ৪৬৫ ইউএস ডলার।

এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে কাঠমান্ডু, পোখারা, নাগরকোটের হোটেল খরচ ব্রেকফাস্টসহ এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ ও ড্রপ অফ। কাঠমান্ডু-পোখারা-কাঠমান্ডু-নাগরকোট- কাঠমান্ডু যাওয়া আসার খরচ। কাঠমান্ডু, পোখারা, নাগরকোটের সাইট সিয়িং-এর ট্রান্সপোর্ট খরচ। তবে বিমান ভাড়া, লাঞ্চ-ডিনার, সাইট সিয়িং-এর এন্ট্রি ফি এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত নয়।

বিভিন্ন সাইট সিয়িং-এর এন্ট্রি ফি খুব একটা বেশি নয়, সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য সাশ্রয়ী এন্ট্রি ফি। আর খাওয়ার খরচও বেশি নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের ভাল মানের রেস্টুরেন্টে খেতে যে খরচ, তার চেয়ে বরং কমই মনে হল। যারা পরিবারসহ কম খরচে দেশের বাইরে ঘুরতে যেতে চান, তাদের অন্যতম পছন্দ হতে পারে নেপাল।

পরদিন ভোরে রওনা দিতে হবে পোখারার উদ্দেশ্যে। গেস্ট হাউজের রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার সেরে নিলাম। ইন্ডিয়ান মেন্যু চিকেন কোফতা কারি আর চিকেন হট কারি দিয়ে রাতের খাবার সারা হল। খাবারের মান অনুযায়ী দাম বেশি নয়। দেশে আগের রাতে ফ্যান চালিয়ে ঘুমিয়েছি আর এখানে ঠাণ্ডায় কাঁপার মতো অবস্থা।

চলবে...

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash.bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!