দাফনের জন্য বাংলাদেশে আসছে জাকির খানের লাশ

নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে বাড়িওয়ালার ছুরিকাঘাতে নিহত বাংলাদেশি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী জাকির খানকে দাফনের জন্য লাশ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা রয়েছে তার পরিবার।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2017, 04:33 PM
Updated : 25 Feb 2017, 05:33 PM

শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় আমিরাত এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লাশ নিয়ে রওনা করেছেন তারা।

ফ্লাইটটি ঢাকায় পৌঁছার পর সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে পাঠানটোলায় গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য জাকির খানের লাশ নিয়ে যাওয়া হবে বলে লাশের সঙ্গে আসা তার ছোটভাই নিয়াজ খান জানিয়েছেন।

এর আগে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ব্রঙ্কসের ভার্জিনিয়া অ্যাভিনিউতে পার্কচেস্টার জামে মসজিদে নিহত জাকির খানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী ও বিদেশিরা ছাড়াও অংশ নেন মূলধারার শোকার্ত রাজনীতিকরা।

এসময় ব্রঙ্কস এলাকার সিনেটর রবিন দিয়াজ এবং অ্যাসেম্বলিম্যান লুইস সেপুলভেদা জাকির খানের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানান।

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসানও ছিলেন জানাজায়।

বুধবার সন্ধ্যায় দিকে থ্রগস নেক এলাকার লগান অ্যাভিনিউয়ে বাসার সামনেই ৪৪ বছর বয়সী জাকির খানকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। 

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের সন্তান জাকির ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার রিয়েল এস্টেট কোম্পানি নামে একটি ব্রোকার প্রতিষ্ঠান চালাতেন। ১৩ বছর বয়সী এক মেয়ে এবং ১২ ও আট বছর বয়সী দুই ছেলেকে রেখে গেছেন তিনি।

হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার জাকির খানের বাড়িওয়ালা টাহার মেহরানকে (৫১) ব্রঙ্কস ক্রিমিনাল কোর্টে হাজির করার পর জামিনহীন আটকাদেশ দিয়েছেন বিচারক ।

জাকির খান ৯ মাস ধরে ভাড়া দিচ্ছিলেন না বলে তিনি আদালতের কাছে জানিয়েছেন।

এসময় বকেয়া ভাড়া আদায়ের জন্যে বাড়িওয়ালা টাহার সিভিল কোর্টে মামলা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছেও গিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

এছাড়া পুলিশের কাছে গিয়েও সুরাহা হয়নি দাবি করে 'আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে জাকিরকে খুন করেন তিনি' বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন মিশরীয় ওই নাগরিক।

জাকিরকে ছুরিকাঘাতের পর কাছের পুলিশ স্টেশনে গিয়ে নিজেই আত্মসমর্পন করেছিলেন তিনি।

আত্মসমর্পনের কারণে তাকে দ্বিতীয় মাত্রার খুনে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে অসন্তোষ জানিয়ে স্থানীয় আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার বলেন, "অবশ্যই প্রথম ডিগ্রির খুনের অভিযোগ আনা উচিত। কারণ, সে বকেয়া ভাড়া আদায়ের জন্যে একজন মানুষকে হত্যা করতে পারেন না।

"এজন্যে আইন-আদালত রয়েছে। তাই হত্যার দায়কে হাল্কা করে দেখার কোনই অবকাশ থাকতে পারে না।"

মিশরীয় আমেরিকান টাহার থাকতেন একই বাড়ির বেইজমেন্টে। উপরতলায় থাকতেন পরিবারসহ থাকতেন জাকির খান।

রিয়েল এস্টেট ব্যবসার পাশাপাশি কম্যুনিটি সার্ভিসেও সরব থাকায় জাকির খান ছিলেন পরিচিত মুখ। সকলেই গভীর শোক প্রকাশ এবং ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

নিহত জাকির ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন। নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কসে বসবাস শুরু করেন। পরে পড়াশোনা শেষ করে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন।

তিনি ব্র্ঙ্কসে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী হিসেবে কমিউনিটিতে পরিচিত লাভ করেন। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডেও ছিলেন সক্রিয় ।

তার সঙ্গীত শিল্পী স্ত্রী ন্যান্সী খানও নিউ ইয়র্কের কমিউনিটির কাছে  একজন পরিচিত মুখ।