টয়লেট করতে ফ্রান্স থেকে সুইজারল্যান্ড

জেনেভায় ঘোরাঘুরির মজা আছে। একবার বাস-ট্রাম-নৌকার টিকেট নিলেই হল। যত ইচ্ছে ঘোরাঘুরি, অনেকটা পেটচুক্তি খাবারের হোটেলের মতো।

আবু সালেহ মোহাম্মদ ইমরান, সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2017, 11:13 AM
Updated : 7 Feb 2017, 11:48 AM
তবে সমস্যা একটা আছে। এ মুল্লুক কোরিয়ার মতো 'টয়লেট হেভেন' না। দেড় বছর কোরিয়াতে ঘোরাঘুরির সময় সব ধরনের উপায়ে গ্রামেগঞ্জে ঘুরেছি। কখনো টয়লেট বিড়ম্বনায় পড়িনি।

সেদিনকার ঘটনা সুইজারল্যান্ড-ফ্রান্স সীমান্তের। ঘুরতে ঘুরতে সুইজারল্যান্ডের মইল্লেসুলাঁ পার হয়ে ফ্রান্সের ভেতর ঢুকে ঘণ্টাখানেক হাঁটলাম। এক সময় ‘ইজতেঞ্জা’ অর্থাৎ টয়লেট চেপে বসল। এখানে ওখানে ছোটঘর খুঁজে পেতে ব্যর্থ হলাম। এক পর্যায়ে তিন নম্বর বিপদ সংকেতে চলে গেলাম।

একটা সুপার মার্কেটে ঢুকতে গিয়ে দেখি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই টয়লেট ব্যবহার করতে দেবে না। কী আর করা! আবার হাঁটা শুরু করলাম। ইংরেজি ‘টি’ লেখা সাইনবোর্ড দেখলেই ‘বড় আশা করে এসেছি গো...’ গান গেয়ে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে দৌড়ে যাই।

বুঝলাম এ সময়ে রবিঠাকুর আমাকে কোন হেল্প করতে পারবেন না। ইউরোপ মুল্লুকে ছোটঘরকে অনেক যায়গায় ‘ডাব্লু সি’ বলে লেখা থাকে, তাও তো দেখি না। একপর্যায়ে প্রকৃতির ডাকের সতর্ক সংকেত চার থেকে পাঁচ নম্বরে উঠে গেল।

ইউরেকা! ইউরেকা! ইউরেকা! ফরাসি ভাষায় কাঙ্খিত সাইনবোর্ড দেখে দৌড়ে গেলাম। হায় খোদা! পিচ্চি একটা টয়লেট। তাও আবার তালাবন্ধ, তবে পয়সা ঢুকালেই খুলে যাবে দরজা। আমার পকেট ভর্তি সুইস ফ্রাঁর কয়েন, পাঁচ পয়সা থেকে পাঁচ ফ্রাঁ পর্যন্ত। পাঁচ পয়সার কয়েন ঢুকাই, দরজা খোলে না।

আবার বিশ পয়সারটা ঢোকাই, তাও খোলে না। এক ফ্রাঁর ঢোকাই তাও দরজা খোলে না। মেশিন আমাকে পয়সা ফেরত দেয়। এবার পাঁচ ফ্রাঁর কয়েন ঢোকাতে গিয়ে দেখি ছিদ্রটা তত বড় নয়। পেটের সতর্কতা সংকেতের কারণে খেয়ালই করিনি কয়েন হতে হবে ইউরো মুদ্রার। বিপদ সংকেত যতই উপরে উঠুক, মেশিন বুঝবে ইউরো মুদ্রার কয়েন! ফ্রাঁ কিংবা ডলার দিয়ে লাভ নেই। বুঝতে পারলাম দশ নম্বর বিপদ সংকেতে পৌঁছানোর আগে ফ্রান্স ত্যাগ করতে হবে।

আমি ফিরে চললাম সুইজারল্যান্ড। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রাকৃতিক কর্ম সারার জন্য এর আগে কেউ এক দেশ হতে অন্য দেশে গিয়েছেন কি না আমার জানা নেই। গিনেস বুক অব রেকর্ডে নাম লেখাতে চাই!

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

ই-মেইল: salehimran@gmail.com

ছবি: রয়টার্স

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!