বিদেশ ভালো (পর্ব-১)

বিদেশ ভালো। বিদেশের ম্যালা গুণ। বিদেশ নিয়ে মোটামুটি সবারই কম বেশি আগ্রহ। কারণ ইহা বিদেশ।

রিনভী তুষার, জার্মানির বার্লিন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2016, 01:29 PM
Updated : 2 Oct 2016, 01:32 PM

যেমন, আমি বিদেশে থাকি বলেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রবাস পেইজ পরিচালনাকারিরা বিনা পয়সায় লেখা পাবার আব্দার করেছেন (তিনি জার্মানিকে নিজের মামা বাড়ি ভাবেন কিনা আমারা জানা নাই) এবং বিদেশ থাকি বলেই আপনারা আমার চোখে জর্মন দেশসহ আরো কিছু দেশ পড়বেন।

আজকের লেখায় থাকছে ডিমের ল্যাড়পা অংশ কুসুম আসবে আরো পরে কুসুম কুসুম করে।

এই  লেখা পড়লে আপনি জানতে পারবেন জর্মনসহ ইউরোপের আরো কিছু দেশে মূল্যে এবং বিনামূল্যে আমার পাওয়া অভিজ্ঞতা। আর এই লেখার একটা স্পেশাল শর্ত আছে তা হইলো আপনি চাহিলেই লেখাটি পড়া বন্ধ করতে পারবেন না। পড়া বন্ধ করলে আমি রাগ হবো। আমি রাগ নিয়ে লিখতে পারি না।

আমি না লিখলে এরা আর আমার লেখা ছাপাবে না। তখন আপনি কী পড়বেন? ছাইপাশ? তাই বলছি, যেহেতু বিদেশ ভালো সেহেতু বিদেশ নিয়ে আজাইড়া লেখাপড়াও ভালো। পড়তে থাকুন।

আজকে যেহেতু ল্যাড়পাবাজি চলবে তাই কিছু খুচরা গল্প বলবো।

প্রথমে বার্লিন। বার্লিন বিষয়ে দুইটা প্রাথমিক জিনিস আপনাকে জানতে হবে। এক. বাংলাদেশ থেকে বার্লিনের কোন বাস ছাড়ে না। সুতরাং ভ্রমণে ভরসা বিমান আর পা’এ হেঁটে ট্রাই করতে পারেন। দুই. বার্লিন এয়ারপোর্টের উচ্চারণ হলো ‘টেগেল’, ‘টেজেল’ নয়।

আমি যেদিন প্রথম বার্লিনে পা রাখি কেমন একটা ঢাকা ঢাকা গন্ধ আমার নাকে লেগেছিলো। মনে হচ্ছিলো প্রচণ্ড শীতের মধ্যে শাড়ি পরে সাবিনা ইয়াসমীন ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘সন্ধ্যার ছায়া নামে এলোমেলো হাওয়া’ গান গাইছেন আর বার্লিন শহর আমাকে ওয়েলকাম করছে।

আমি বার্লিন থেকে এবার একটু দুই ঘণ্টার দূরত্বে যাচ্ছি। ইস্তানবুল। ইস্তানবুলে আমার ট্রানজিট ছিলো চার থেকে সাড়ে চার ঘন্টা। ইস্তানবুল এয়ারপোর্টে বিশ্ব সুন্দরীরা সবাই পার্ট-টাইম জব করে বলে আমার মনে হয়েছে। আপনি গিয়ে তাদের কাউকে না পেলে আপনার দূর্ভাগ্য।

যা হোক সেই এয়ারপোর্টেও সব ভালোর মধ্যে খারাপ হলো দোকানদাররা। একটু খেয়াল না করলেই আপনারে ধরায়ে দিবে টার্কিশ কয়েন যতোই আপনি ডলার আর ইউরো দেন। অতএব শয়তান সাবধান। টার্কিশদের ব্যবহার দেখে ক্ষণে ক্ষণে আপনার যদি ‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়’ এই প্রবাদ মনে পরে, তবে আমার ইমেইল অ্যাডড্রেসখানা ব্যবহার করে আমাকে মনে করতে পারেন।

চলেন আবার ফেরত বার্লিন যাই। আমার প্রথমদিন বার্লিনে স্থায়িত্ব ছিলো মাত্র ঘন্টা দেড়েক। বার্লিনে গিয়ে আপনি নগর পরিকল্পনা কী- তা দেখবেন। দেখবেন ব্যস্ত রাস্তায় শেয়ালের পারাপার। শহুরে বন। দেখবেন আর দয়া করে ভাববেন কেন আমাদের সুন্দরবন বাঁচানো দরকার।

অবাক নয়নে বার্লিন দেখতে দেখতে আপনি রাস্তা পার হবেন তবে তার জন্য আপনাকে সিগনাল মানতে হবে। জার্মানির রাস্তায় গাড়ি যে নিয়মে চলে একই নিয়মে মানুষজন হাঁটে ফুটপাথে। আপনি আউসল্যান্ডার মানে বৈদেশি হয়ে নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করলে বা না জানলে কেউ একজন আপনাকে এসে নিয়ম শিখিয়ে দিয়ে যাবে। আমাকেও দিয়েছিলো।

যেহেতু আপনারে জর্মন দেশে নিয়াই আসছি এবার একটু সিরিয়াস হই। এই দেশ একটু সিরিয়াস। মানে একটু না ভালোই সিরিয়াস। এদের সবকিছুর জন্য আইন আছে। সেসব আইন আবার পার্লামেন্টে পাশ করা। যেমন স্ট্রাসে (স্ট্রিট) বানান করতে ‘ডাবল এস’ ব্যবহার না করে ‘এসসেট’ ব্যবহার করা বাঞ্চনীয়- এটাও আইনে আছে।

জর্মনরা সময়ের ব্যাপারে ‘পুয়ংকটলিশ’। এই  শব্দের মানে সময়মতো জেনে নিলে ভালো করবেন। আর যদি না জানেন তবে বলে দেই কী হতে পারে। একটু শক্ত হউন। ‘পুয়ংকটলিশ’ শব্দের মানে না জানাতে আমার কী হয়েছিলো তার একটা উদাহরণ দিচ্ছি: একবার এক রমণীর (ভাবুন কদাচিত প্রেমিকা) জন্য অনলাইনে গিফট কিনেছিলাম (কী গিফট কিনেছিলাম জানতে চাইলে ইনবক্স করুন)। তো কম্পেয়ার সি মিয়ারক্যাত ডটকম সেই গিফট সোর্স করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ থেকে। আমার গিফটের জন্য আমার ডিউটি দেবার কথা ছিলো। ডিউটি পে করার জন্য ওরা আমাকে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে যেতে বলেছিলো।

যেহেতু আমার পিতামহের জন্ম বাংলাদেশ আমি সেখানে গিয়ে পৌঁছেছিলাম অফিস বন্ধ হয়ে যাবার মিনিট পনের পর। তারা আমাকে আরও একটা সুযোগ দিয়েছিলো আমি নেইনি। কারণ আমাদের রক্তে বয়ে চলা বহুকণিকার এক কণিকার নাম ডিউটি ফ্রি। কর-ফর আমরা ভালা পাই না।

যা হোক তারা আমাকে রেজিস্টার্ড পোস্ট পাঠালো। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিন অফিস আমার অ্যাপার্টমেন্ট ডর্ম থেকে পায়ে হেঁটে প্রায় ১০ মিনিট সাইকেলে দুই মিনিট কিন্তু আমি পৌঁছলাম প্রায় একমাস পর। এর পরেরটা ইতিহাস.. সেই ইতিহাস গুণতে আমার ফেঁটেছে.. (শূন্যস্থান আগামী পর্বে পূরণ হবে) তবে তা শুনে আপনার হৃদয় ফেঁটে যেতে পারে, আমাকে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদতে ইচ্ছা হতে পারে.. লেখার প্রথম পর্বেই এতোটা ইমোশন আমি নিতে পারবো না।

আগামী পর্বের জন্য তোলা রইলো.. সেই পর্যন্ত আপনি টিস্যুসহ আর আমি এক পকেট যাতনাসহ.. অপেক্ষা প্রডিউস মেওয়া.. আউফভিদারজেহেন, বিস মরগেন। আগামীকাল আবার দেখা হবে।

লেখক: গবেষণা আর লেখালেখির চেষ্টা করেন

email: kurchiphool@gmail.com

ছবি কৃতজ্ঞতা: রিনভী তুষার