বিজিবি'র সিপাহি এখন কাতারের ঘড়ি মেকার

পরিবারের আর্থিক অনটন দূর করার স্বপ্ন নিয়ে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র (বিজিবি) সিপাহি পদের ১১ বছরের চাকরি ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে ২০১৪ সালে প্রবাসী জীবন শুরু করেন ইমরান হোসেন।

মামুন সন্দ্বীপ, কাতার থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2016, 02:22 PM
Updated : 27 Sept 2016, 02:22 PM

এক বছর বিভিন্ন কোম্পানিতে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও তেমন সুবিধা করতে পারেননি। অবশেষে বরিশালের এক বন্ধুর পরামর্শে ৩৪ বছর বয়সী ইমরান কাজ শুরু করেন ঘড়ি মেকার হিসেবে।

কাতারের রাজধানী দোহায় জেদিদ ঢাকা রেস্তোরাঁর সামনে ঘড়ি মেকারের ছোট একটি দোকান নিয়ে এখন ব্যবসা করেন তিনি। প্রতিমাসে আয় হয় ৫০ হাজার টাকারও বেশি। ঘড়ি মেকারের কাজ ছাড়াও ইমরানের রয়েছে হরেক রকমের মোবাইল কার্ড, মোবাইল ডলার কার্ড ও বিকাশের ব্যবসা।

ইমরান হোসেন বলেন, “এই দেশে কাম করতে আইসি। ট্যাকা কামাইয়া দেশে পাডাইতে আইসি। বইস্যা থাকার সময় নাই, আপনিও সাংবাদিকগিরি বাদ দিয়া ট্যাকা কামান। ট্যাকা ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের দাম নাই।”

‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এ সিপাহি পদে চাকরি করতেন ইমরান হোসেন। বাবার নাম আব্দুল মোতালেব। বাড়ী মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার এনায়েত নগর গ্রাম। পরিবারের বড় ছেলে ইমরান। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে এক ভাই চাকরি করেন সেনা বাহিনীতে, আরেক ভাই লেখাপড়া করেন। দুই বোনের বিয়ে দিয়েছেন, ইমরান হোসেন নিজেও বিয়ে করেছেন। তার মেয়ে ৩য় শ্রেণিতে পড়ে।

মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কাতার। এটি পারস্য উপসাগরের ছোট দেশ, গরম ও মরুভূমির দেশ। মাথাপিছু আয়ে পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশও কাতার। দেশটিতে কর্মরত আছেন তিন লাখের বেশি বাংলাদেশি। এদের অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।

কাতারের ব্যবসা-বাণিজ্যে অন্যতম খাত হচ্ছে কনস্ট্রাকশন ওয়ার্ক। কনস্ট্রাকশনে, বিভিন্ন নির্মাণ শ্রমিকের পেশায় কাজ করে পরিবারের আরও চাহিদা মেটাতে ইমরান শেষমেষ হয়ে গেলেন ঘড়ির মেকার।

ইমরান বলেন, “পরিবার পরিজন ছাইরা প্রবাসে অমানুষিক পরিশ্রম করা শারীরিক ও মানসিকভাবে চরম যন্ত্রণার। এইডা আগে জানতাম না, প্রবাসে আইস্যা জানছি। প্রবাসীরা পরিবারের জন্য কত ত্যাগ স্বীকার করতাসে এইডা অনুভব করার সময় য্যান কারও নাই। দেশ থেকে শুধু কয়- ট্যাকা চাই, বিদেশ থাইক্যা বেশি বেশি করে ট্যাকা পাডাও।”