পিঠা উৎসব ‘ভুলিয়ে দেয়’ জাপান যাপনের কষ্ট

জাপানের রাজধানী টোকিওর দক্ষিণে কানাগাওয়াতে হয়ে গেল বৈশাখী পিঠা উৎসব।

শাহীন আক্তার স্বাতী, জাপান থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2016, 08:52 AM
Updated : 18 May 2016, 08:52 AM

চিরায়ত গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য প্রবাসে তুলে ধরার লক্ষ্যে গত ৮ মে এ উৎসবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হরেক রকমের পিঠা উপস্থাপন করা হয়। নানা নামের, নানা ঢংয়ের, কতোই না তাদের বিচিত্র স্বাদ!

সেদিন ছিল বিশ্ব মা দিবস। মা যেন সেদিন প্রবাসীদের উঠোনে এসেছিলেন পিঠার ডালি নিয়ে! বাহারি পিঠার মৌ মৌ গন্ধ আর শৈশবে মায়ের কোলে বসে পিঠা খাওয়ার স্মৃতি বার বার ফিরছিল হৃদয়ে।

ভোজন রসিক বাঙালি কেবল পিঠার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, উৎসবে একদিকে যেমন ছিল ২৫ রকমের বাহারি পিঠা, অন্যদিকে ছিল ২০ রকমের ভর্তা, পোলাও, রোস্ট, রেজালাসহ আরও নানা ধরনের খাবার-দাবার।

বিকালের নাস্তায় পিঠার সঙ্গে ছিল শিঙাড়া, সমুচা, দই, জর্দাহ আরও অনেক কিছু।

আর এ সব পিঠা, যাবতীয় সুস্বাদু খাবার তৈরি করেছিলেন জাপানের প্রবাসী ‘ভাবীরা’। তাদের কঠোর পরিশ্রম, আন্তরিকতা, ভালোবাসা আর সুনিপুণ হাতের তৈরি পিঠা-পায়েশ সেদিন প্রবাসে থাকার কষ্টকে অনেকাংশে ভুলিয়ে দিয়েছিল।

পিঠা উৎসব রঙিন করে তুলতে ভাবীরা সেদিন সেজেছিলেন বাসন্তি সাজে; খোঁপায় ফুল, দুহাত ভরা  চুড়ি আর বাসন্তি রংয়ের শাড়ি। এ যেন গ্রাম-বাংলার চিরচেনা রূপ!

ভাইরাও সেদিন পিছিয়ে ছিলেন না। তারাও পরেছিলেন বাহারি রংয়ের পাঞ্জাবি। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কলকাকলিতে মুখরিত ছিল পুরো দিন।

তিনটি পর্বে বিভক্ত উৎসবের প্রথম পর্বে ছিল-ছবি তোলা। বহুল প্রতীক্ষিত বৈশাখী পিঠা উৎসবকে স্মৃতির অ্যালবামে ধরে রাখার প্রয়াসে সবাই সমবেত হয়েছিলেন মঞ্চে।

এরপর শুরু হয় দুপুরের খাবারের আয়োজন। ভর্তা প্রেমী বাঙালিরা সেদিন বিদেশের মাটিতে ২০ পদের বাঙালি স্বাদের ভর্তা পেয়ে যেন আনন্দে ‘আত্মহারা’ হয়ে গিয়েছিলেন। খাওয়ার পর্বটা যেন সেদিন শেষ হতে চাচ্ছিল না।

দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সবাই দাঁড়িয়ে সমবেত কণ্ঠে গান বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। এরপর শিশুদের নাচ, গান, ছড়া ও বাঁশির সুরে বাংলার কথাই ফুটে ওঠে।

মা দিবসকে কেন্দ্র করে ছিল একটি বিশেষ পর্ব। খালিদ হাসান মিলুর ‘কতদিন দেখি না মায়ের মুখ’ গানটি চলার সময়ে সবাইকে বলা হয় মাকে স্মরণ করে একটি সাদা কাগজে অনুভূতির কথা লিখতে।

এ সময় অনেকেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন ইলিয়াছ মুনসি, তোফাজ্জল হোসেন ও কাজী আরিফ।

টোকিও প্রবাসীদের মধ্যে পরিচিত কবি মঈনুল ইসলাম মিল্টনের লেখা কবিতা আবৃত্তি করে শোনান ববি রহমান। কবির সঙ্গে দ্বৈতভাবেও তিনি আরও একটি কবিতা পাঠ করেন। কবি নির্মলেন্দু গুণের যাত্রাভঙ্গ কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনান শাহীন আক্তার স্বাতী।

চ্যানেল আইয়ের জাপান প্রতিনিধি কাজী ইনসানুল হকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবচেয়ে কম বয়সী ভাবী, সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন ভাবী এবং অধিক সন্তান নিয়ে যিনি কষ্ট করে পিঠা বানিয়ে এনেছেন তাকে পুরষ্কৃত করা হয়।

এছাড়াও উৎসবের অন্যান্য আয়োজনে ছিল শিশুদের চেয়ার সিটিং, বড়দের পিলো পাসিং ইত্যাদি।

অনুষ্ঠান উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন আহমেদ জহির, জেড এম আবু সিনা, স্বপন মিঞা ও সুমন রহমান।

শেষ ধাপে ছিল উৎসবের মূল আকর্ষণ পিঠা পর্ব। টেবিলে সাজানো হরেক রকম পিঠা যেন সবাইকে হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। সমস্ত দিনের শেষে বিকেলের এই পর্বে সবার তৃপ্তির ঢেকুর আর মনখোলা হাসি প্রমাণ করে বাঙালিরা যেখানেই থাকুক না কেন বাংলার উৎসব ঐতিহ্যকে পৃথিবীর মানচিত্রে তুলে ধরতে সদা প্রস্তুত।