আপিল বিভাগের আদেশের পর আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মন্ত্রিত্ব এখনও আছে কি না, হাই কোর্টেই তার নিষ্পত্তি হতে পারে বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল হোসেন।
Published : 03 Jul 2015, 04:38 PM
শুক্রবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সনদ বিরতণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বিচারাধীন ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য করা উচিৎ না।...আমি মনে করি কেউ আইনের ঊর্ধে নয়।... হাই কোর্টে এই প্রশ্নগুলো উঠলে হাই কোর্ট সঠিক আদেশ দিতে পারবে।”
আট বছর আগের একটি দুর্নীতি মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া মায়ার খালাসের রায় গত ১৪ জুন বাতিল করে দেয় আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে হাই কোর্টে নতুন করে এ মামলার শুনানির নির্দেশ দেওয়া হয়।
সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধভাবে ২৯ লাখ টাকার সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে দুদকের করা এ মামলায় ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত দুই ধারায় মায়াকে মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়। সেই সঙ্গে তাকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়।
আপিল বিভাগের আদেশের পর মায়ার মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য পদ আর থাকে কিনা সে প্রশ্ন ওঠে। বিষয়টি নিয়ে মায়ার নীরবতার মধ্যে বিএনপি তার পদত্যাগেরও দাবি তুলেছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন।
তার মন্ত্রী পদে থাকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ ইতোমধ্যে একটি উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন।
ইউনুছ আলী বলছেন, সংবিধানের ৬৬ এর ২ (ঘ) দফা অনুসারে দণ্ডিত ব্যক্তি সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী পদে থাকতে পারেন না।
সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে সংসদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি কেউ নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং মুক্তির পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য হবেন না।
তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম মনে করেন, মায়ার সংসদ সদস্য পদ ধরে রাখা ‘এখন উচিত নয়’।
তবে এই প্রশ্নের মীমাংসা সংসদে হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই আইনজীবী।
‘আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের সেতুবন্ধন’
সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস স্ট্যাডিজ (সেইলস) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্যারা লিগ্যাল কর্মীদের (আইন সহায়তাকর্মী) সক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অবহেলিত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকার সম্পর্কে জানাতে ও আইনি সহায়তা দিতে আইন সহায়তা কর্মীরা আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির দরিদ্রদের আইনগত অধিকার বিষয়ক কমিশনের এক প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে ড. কামল হোসেন বলেন, দরিদ্র জনসাধারণকে আইনি অধিকারের বাইরে রাখা কেবল গুরুতর অস্বচ্ছতাই নয়, তা জনগণের জীবন-মান উন্নয়নের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ও দরিদ্র দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে।
তিনি বলেন, আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে সারা বিশ্বের চারশ কোটি মানুষ ভাল জীবন মান অর্জনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
প্যারা লিগ্যালকর্মীদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সেইলসের গভর্নিং কাউন্সিলের সভাপতি ড. কামাল বলেন, তারা সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে ও তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, “জনগণকে তার আইনগত অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্র ও সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। রাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া নাগরিকের পক্ষে আইনগত অধিকার অর্জন করা সম্ভব নয়।”
“এ সহায়তা নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের কোন করুনা নয় বরং সাংবিধানিক দায়িত্ব। আইনগত সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্যারা লিগালকর্মীরা বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীর মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে, বিশেষ করে দুঃস্থ, আইনি সহায়তা বঞ্চিত, দরিদ্র, অসহায় ও অসচেতন জনগণ।”
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফুয়াদ হাসান মল্লিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভারতের সেন্টার ফর সোশ্যাল জাস্টিসের গগন শেঠি ও সেইলস-এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান বক্তব্য দেন।
এ সময় সেইলস্ পরিচালনা পরিষদের সদস্য ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন ফজলে হাসান আবেদ, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ও ড. হামিদা হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকেরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন্স, ভারতের সেন্টার ফর সোশ্যাল জাস্টিস ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ২৮ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলে। এতে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও নেপালের ২১ জন মানবাধিকার ও আইনি সহায়তাকর্মী প্রশিক্ষণ নেন।