ঢাকা সফরে আসতে যাওয়া নরেন্দ্র মোদীকে প্রশংসায় ভাসিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ভারতবিরোধী দল নয়।
Published : 27 May 2015, 06:30 PM
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের আগে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকারী আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “বিএনপি কখনও ভারতবিরোধী রাজনীতি করেনি, এখনও করে না, ভবিষ্যতেও করবে না।”
প্রতিবেশী দেশটির সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপিকে ভারতবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতারা বলে আসতেন, ধানের শীষে ভোট না দিলে দেশ বিক্রি হয়ে যাবে।
দেড় বছর আগে বিএনপিকে বাদ রেখে আওয়ামী লীগের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভারতের ‘মদদের’ কথা বিএনপি নেতাদের মুখে প্রকাশ্যেই এসেছিল।
২০১৩ সালের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক মাস্টারপ্ল্যানে একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে আওয়ামী লীগ।
ফখরুল ভারতকে ইঙ্গিত করলেও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস তখন সরাসরিই বলেছিলেন, “এই সরকারের (আওয়ামী লীগ) ওপর আজ ভারতীয় সিন্দাবাদের ঘোড়া চেপে বসেছে।”
বিএনপি জোটের আন্দোলন দমনেও পুলিশের গুলিবর্ষণেও ভারতের ‘উসকানি’ রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এই সদস্য।
প্রতিবেশী ভারতের বিষয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন এখন বলছেন, “আমরা জনগণের স্বার্থে কথা বলি। তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের কথা বলে আসছি, সীমান্ত হত্যার নিন্দা করে আসছি।
“এসব কথা বলার অর্থ এই নয় যে, আমরা ভারতবিরোধী হয়ে গেছি। আমাদের দলের পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে- সব দেশের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়। এই নীতিতে বিএনপি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে কাযর্কর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।”
বিএনপিকে ‘ভারতবিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করে আওয়ামী লীগ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায় বলে দাবি করেন রিপন।
২০১৩ সালের মে মাসে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফরের সময় তার সঙ্গে বৈঠক বাতিল করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রতিবেশী দেশটির কড়া সমালোচনায় পড়েছিলেন। তবে এবার নরেন্দ্র মোদীর সফরকে স্বাগত জানিয়ে আসছে বিএনপি।
আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দলের চেয়ারপারসন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এই সফরকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষ ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ভালোবাসা দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে এখন প্রস্তুত হয়ে আছে।”
বাংলাদেশ-ভারতের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যা স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরের সব বাধা কেটে যাওয়ার পর ৬ জুন প্রথমবারের মতো ঢাকা সফরে আসছেন নরেন্দ্র মোদী।
রিপন বলেন, “আমরা অপেক্ষায় আছি, নরেন্দ্র মোদী ঢাকায় আসবেন, তার সফর সফল হবে। আমরা আশা করব, এই সফরের মধ্য দিয়ে তিস্তা চুক্তি, বিভিন্ন নদীর পানি সমস্যাসহ অমীমাংসিত সব সমস্যার সমাধান আসবে। সীমান্ত হত্যা বন্ধে সুরাহা হবে। দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত হবে ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিবিড় হবে।”
হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি নেতা মোদীর প্রশংসা করে বিএনপি নেতা বলেন, “তিনি অত্যন্ত দূরদর্শী নেতা। যেখানেই গেছেন তিনি, মানুষের মন জয় করেছেন। বাংলাদেশের মানুষও তার সফরের প্রতীক্ষায় আছে।
“ভারতের বর্তমান সরকার বলে আসছে, তারা প্রতিবেশী দেশের কোনো বিশেষ দল নয়, কান্ট্রি টু কান্ট্রি সম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরাও এই নীতি বিশ্বাস করি। তাদের এই বক্তব্যে প্রতিফলনও আমরা দেখছি।”
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দেখতে নরেন্দ্র মোদীর চাওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি; যে দলটি বলছে, বাংলাদেশ এখন ‘গণতন্ত্রহীন’ অবস্থায় রয়েছে।
ভোট বর্জন করে বিরোধীদলীয় নেতার আসন থেকে ছিটকে পড়া খালেদার সঙ্গে মোদীর বৈঠকের কোনো সূচি নির্ধারিত রয়েছে কি না, তা সাংবাদিকরা জানতে চান বিএনপি নেতা রিপনের কাছে।
উত্তরে তিনি বলেন, “দেখুন এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত কিংবা চীনের মতো বিশ্বে বৃহৎ দেশের সরকার প্রধান কোনো দেশ সফর করলে তার নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে সফরসূচিগুলো আগে থেকে ঘোষণা করা হয় না। গোপন রাখা হয়।”
যদি বৈঠক হয়, তাহলে খালেদা জিয়া দলের বক্তব্য অনুযায়ী ‘গণতন্ত্রহীনতার’ কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় তুলবেন কি না- সে প্রশ্ন কৌশলী উত্তরে এড়িয়ে যান সাবেক ছাত্রনেতা রিপন।
“ভোটবিহীন একটি নিবার্চনে ১৫৪ জন অনির্বাচিত সদস্য নিয়ে গঠিত সংসদের বিষয়টি দেশে-বিদেশে সকলের জানা। দেশে গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার পরিস্থিতি কী- তা সকলে জানেন। এসব বিষয়গুলো আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ভারতও বিষয়গুলো জানে। তবে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কেউ দূতিয়ালি করবে, তা আমরা চাই না।”
নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিপনের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মাহমুদুল হাসান, কেন্দ্রীয় নেতা আফজাল এইচ খান, আবদুস সালাম আজাদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, আসাদুল করীম শাহিন, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার উপস্থিত ছিলেন।