সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে থাকা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একাধিক নেতার বক্তব্য, দলকে ‘রাহুমুক্ত’ করতে হলে অবিলম্বে মহাসচিব পরিবর্তন প্রয়োজন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের সবারই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
ঢাকা উত্তরে বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল পেয়েছেন ২ হাজার ৯৫০ ভোট, ঢাকা দক্ষিণে সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন পেয়েছেন ৪ হাজার ৫১৯ ভোট এবং চট্টগ্রামে সোলায়মান আলম শেঠ পেয়েছেন ৬ হাজার ১৩১ ভোট।
গত ২৮ এপ্রিল ভোটগ্রহণের মাঝপথে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা।
সেদিন ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টিরও ছিল বলে দাবি করেছেন দলটির একাধিক নেতা। তারা বলছেন, পরে আকস্মিকভাবেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়।
ভোটের আগের রাতে দলে চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের বারিধারার বাসায় একটি বৈঠক হয়েছিল। পরিবেশ সুষ্ঠু না থাকলে ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত ওই বৈঠকে হয়েছিল বলে এক নেতা জানিয়েছেন।
ওই বৈঠকে ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল।
রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা(ভোটের) আগের দিন সন্ধ্যায় খবর পেয়েছিলাম ২৮ তারিখ বিভিন্ন কেন্দ্র দখলের প্রস্তুতি চলছে। স্যার (চেয়ারম্যান) কে বিষয়টি জানানোর পর তিনি আমাদের তার বাসায় ডাকলেন। রাত ১০টার দিকে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পরিবেশ সুষ্ঠু না থাকলে ভোট বর্জন করা হবে।”
ভোটের দিন চিত্র দেখে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বয়কটের ঘোষণার অনুমতি চাইতে সকাল ১১টার দিকে এরশাদের বাসায় গিয়েছিলেন রুবেল।
“সেখানে তখন ছিলেন মহাসচিব এবং আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আমাকে জানানো হল, পার্টি ভোট বয়কট করছে না।”
সিদ্ধান্ত বদলের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সব কিছু তো বিস্তারিত বলা যায় না, আমাদের হাত-পা বাঁধা। তবে স্যার নির্বাচন বয়কটের পক্ষে ছিলেন।”
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৈয়দ মিজানুর রহমান হিমু বলেন, “আমরা আসলে খুব বিব্রতকর অবস্থায় আছি। একটি দলের মহাসচিব যদি অন্য দলের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে তাহলে তো ওই দলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”
বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশ নেওয়ার পর এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদারকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে আনেন এরশাদ।
জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে নিতে তৎপর বাবলু আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠজন বলে দলটিতে পরিচিত।
মহাসচিব পদে পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান জানিয়ে জাতীয় পার্টি নেতা হিমু বলেন, “আমরা এমন ব্যক্তিকে মহাসচিব হিসেবে দেখতে চাই, যিনি দল এবং নেতা-কর্মীদের কাছে বিশ্বস্ত থাকবেন।”
বাবলুর বিষয়ে জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলেও একই প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়।
নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য বাবলু জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠের বদলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের পক্ষে কাজ করেছেন।
সোলায়মান শেঠ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ঘটনা ঘটেছে এবং আমার কাছে তার প্রমাণও আছে।”
মহাসচিব পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, “স্যার (এরশাদ) হলেন দলের চেয়ারম্যান। এখন স্যারের একটা ডিসিশন নেওয়ার সময় এসেছে। আমি কয়েকদিন পর ঢাকায় এসে এ বিষয়ে স্যারের সঙ্গে আলাপ করব।”
এ বিষয়ে বাবলুর সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তার ঘনিষ্ঠ এক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নির্বাচনের পর দিন থেকে বাবলু চট্টগ্রামে আছেন এবং কারও ফোন ধরছেন না।