ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস আগাম জামিন পাবেন কি-না তা জানা যাবে আগামী বুধবার।
Published : 13 Apr 2015, 05:49 PM
বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার তার জামিন আবেদন শুনে আদেশের এই দিন ঠিক করে দেয়।
ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্বাসের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী ও মাহবুব উদ্দিন খোকন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশিরউল্লাহ।
শুনানি শেষে আদালত বলেন, মির্জা আব্বাস বাসায় যেতে পারবেন এবং আদেশের দিন আদালতে আসবেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না, নির্বাচনী প্রচারেও অংশ নিতে পারবেন না।
আদালত থেকে বেরিয়ে নিজের কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এর ব্যাখ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত বলেছেন, এখন যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থা যাতে থাকে। এর অর্থ হলো যাতে মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার না করা হয়।”
অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, মির্জা আব্বাস তিনটি আবেদন করেছেন। পল্টন ও মতিঝিল থানার দুটি নাশকতার মামলা ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশনের করা একটি মামলায় তিনি আগাম জামিন চেয়েছেন।
তবে দুদকের মামলা শুনানির জন্য আলাদা বেঞ্চ থাকায় ওই মামলার শুনানি এদিন হয়নি। বাকি দুটি আবেদন আদালত শুনেছে বলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা জানান।
“আদালত দুপক্ষের বক্তব্য শুনেছেন। উনারা আদেশ দেবেন আগামী পরশু।”
দুদকের মামলার বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, আদালত কোনো কোনো আদেশ না দিলেও মৌখিকভাবে জানিয়েছেন, আবেদনটি তারা শুনবেন না।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আদালত আদেশ দিয়েছেন... রাষ্ট্রপক্ষ তাকে (মির্জা আব্বাস) এখন এই মামলায় গ্রেপ্তার করবে না এবং উনিও নির্বাচনী প্রচারে কোনো রকম অংশগ্রহণ করবেন না। জনসংযোগ বা মিডিয়ার সামনে বক্তব্যও দেবেন না। আদালত থেকে উনি ঘরে যাবেন এবং যেদিন রায় হবে উনি আদালতে উপস্থিত হবেন।”
দুদকের মামলায় আব্বাসকে গ্রেপ্তার বাধা আছে কি না জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, “আমি এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেব না।”
মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, “শুনানি শেষ হয়নি। বুধবার এটি আদেশের জন্য থাকবে। সেদিন হয়ত আরও কিছু শুনানি হতে পারে।”
তিনি বলেন, “এ মামলায় আদেশ না হওয়া পর্যন্ত মির্জা আব্বাস যে অবস্থায় আছেন সে অবস্থায় থাকবেন, এ ব্যাপারে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন। মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা যাবে না।”
দুদকের মামলা প্রসঙ্গে আব্বাসের এই আইনজীবী বলেন, “উনারা বলেছেন তাদের জুরিশডিকশন নাই, অন্য আদালতের জুরিশডিকশন। আমরা দেখিয়েছি এই কোর্টের জুরিশডিকশন। এ ব্যাপারেও পরশু সিদ্ধান্ত হবে।”
পল্টন থানার মামলাটি পুলিশ দায়ের করে ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর। বাসে অগ্নিসংযোগ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের অভিযোগ রয়েছে এ মামলায়।
চলতি বছর ৪ জানুয়ারি মতিঝিল থানায় দায়ের করা হয় বিস্ফোরক আইনের অন্য মামলাটি। আর দুদক ২০১৪ সালের ৬ মার্চ শাহবাগ থানায় অপর মামলাটি দায়ের করে।
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা এ মামলার এজাহারে মির্জা আব্বাসের নাম না থাকলেও ‘গ্রেপ্তারের আশঙ্কায়’ তিনি জামিন চেয়েছেন বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বিএনপির মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, তাতে তার নামে আগে ২৪টি এবং বর্তমানে ৩৭টি ফৌজদারী মামলা থাকার কথা বলা হয়েছে।
২৮ এপ্রিল ভোট সামনে রেখে পুরোদমে প্রচার চললেও মামলা মাথায় নিয়ে এই বিএনপি নেতা এতোদিন সামনে আসেননি। মগ প্রতীক নিয়ে তার পক্ষে ভোট চাইছেন স্ত্রী আফরোজা আব্বাস।
এই প্রেক্ষাপটে রোববার আগাম জামিনের আবেদন জানানোর পর নিয়ম অনুযায়ী শুনানিতে হাজির থাকতে সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হাই কোর্টে আসেন মির্জা আব্বাস। বেলা আড়াইটায় শুনানি শুরুর আগ পর্যন্ত তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সদস্যদের কক্ষে সময় কাটান।
মধ্যহ্ন বিরতির পর পৌনে তিনটা থেকে পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত শুনানি চলে।
আব্বাসের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানিতে বলেন, “তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তার শঙ্কা, তাকে হয়রানি করা হতে পারে।”
এই বিএনপি নেতাকে জামিন দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “সামিয়ক সময়ের জন্য প্রতিকার চাইছি। ভোটারদের কাছে যাওয়ার জন্য এবং শঙ্কমুক্ত ও মুক্তভাবে চলাচলের জন্য। আবেদনকারী সাবেক সংসদ সদস্য। আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি দেশের বাইরে যাবেন না।”
ঢাকা মহানগর পুলিশ বলেছিল, বিভিন্ন ফৌজদারি মামলার আসামিদের মধ্যে যারা জামিন না নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
এ বিষয়টিকে ‘হয়রানি’ আখ্যায়িত করে নির্বাচনে সবার জন্য ‘সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে’ মামলার আসামি নেতাকর্মীদের জামিন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।