আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়ে আর গ্রেপ্তার তালিকা করে সরকারের ‘শেষ রক্ষা’ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 15 Dec 2014, 09:26 PM
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির এক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। শুনলাম বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে তালিকা করা হচ্ছে। আরো ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
“আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই-৫০ হাজার কেন, ৫০ লাখ পুলিশ নিয়োগ দিয়ে কিংবা গ্রেপ্তারের তালিকা করে অবৈধ সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। কারণ তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
“কেবল পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী-পুলিশ-র্যাবের ওপর নির্ভর করে এরা টিকে আছে।’’
গণতন্ত্র ‘ফিরিয়ে’ আনতে খালেদা জিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আন্দোলনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বানও জানান বিএনপির মুখপাত্র।
বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেকটি মেরে তাকে কবরে পাঠিয়েছে। এখন গণতন্ত্র শহীদ হয়ে গেছে।”
জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সরকার দমন-পীড়ন নীতির পথ বেছে নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
“এভাবে দমন-পীড়ন চালিয়ে কিংবা গ্রেপ্তারের তালিকা করে কোনো স্বৈরাচারই শেষ রক্ষা পায়নি। এ সরকারও পাবে না।
“পঁচাত্তরের ২৫ জানুয়ারি একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজন করেও অগাস্ট মাসে দুঃখজনকভাবে তৎকালীন সরকারকে বিদায় নিতে হয়েছিল। নয় বছরের স্বৈরশাসক এরশাদ সাহেব নব্বইয়ের ৫ ডিসেম্বরও ভাবেননি, পরের দিন তাকে চলে যেতে হবে।’’
প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের প্র্ধানমন্ত্রী যদি মনে করে থাকেন, গুম-খুন-গুপ্তহত্যা করে তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকবেন, তাহলে তিনি ভুল করছেন।
“জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেবল পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। দেশের মানুষ এই সরকারকে উৎখাত না করে ঘরে ফিরে যাবে না।”
তিনি বলেন, “গতকাল (রোববার) আওয়ামী লীগের সভানেত্রী রুচিহীন ও অশ্লীল ভাষায় দেশনেত্রীকে আক্রমণ করে কথা বলেছেন। এসব কথা আমরা মুখে উচ্চারণই করতে চাই না। শুধু তাকে বলব, আপনারা হায়না হয়ে আক্রমণ করছেন। হায়না হয়ে সব কিছু খেয়ে ফেলছেন। মানুষখেকোর মতো গোটা জাতিকে খেয়ে ফেলছেন।’’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অফ বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পর্কে সরকারের সমালোচনার জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, “টিআইবি দেশে দুর্নীতি বেড়েছে বলায় তারা সরকারের দৃষ্টিতে খারাপ। সুজন সুশাসনের অভাবের কথা বলেছে বলে তারা খারাপ হয়ে গেছে। একমাত্র তারাই (আওয়ামী লীগ) ভালো, যারা দেশটাকে অন্ধকার গহ্বরের দিকে নিয়ে গেছে।
“আজ আমরা পড়েছি লুটেরাদের হাতে। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে। আমাদের এই আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। এই আন্দোলনকে এবার স্তব্ধ করা যাবে না।”
আলোচনা সভায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বলেন, একাত্তর সালে আওয়ামী লীগ সত্যিকার অর্থে দেশের স্বাধীনতা চাইলে মার্চ মাসে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠকে বসতো না।
“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন তার তখন ছিল না। এটাই সত্য।’’
চট্টগ্রামের কালুরঘাটে মেজর জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণার কথা উল্লেখ করে ওই সময়ে জিয়ার সহকর্মী অলি বলেন, “সম্মুখযুদ্ধের সেনানায়ক ও মুক্তিযোদ্ধারা বিএনপিতেই সবেচেয়ে বেশি। আওয়ামী লীগে একজনই খেতাবধারী আছে। তিনি হচ্ছেন ইপিআরের মেজর রফিক।
“আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খাটো করে দেখতে চাই না। তিনি এই জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু তিনি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি পাকিস্তানিদের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে পশ্চিম পাকিস্তান চলে যান।’’
রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দিয়েছে বলেও দাবি করেন অলি আহমেদ।
মির্জা আলমগীরের সভাপতিত্বে ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুকের পরিচালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, শমসের মবিন চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।
অঙ্গসংগঠনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা দলের আবুল হোসেন, মহিলা দলের নুরে আরা সাফা, যুব দলের আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মীর সরফত আলী সপু, ছাত্র দলের আকরামুল হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, এএসএম আবদুল হালিম, আহমেদ আজম খান, ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম, খায়রুল কবীর খোকন, হাবিবুর রহমান হাবিব, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, শিরিন সুলতানা, শফিউল বারী বাবু, হাফেজ আবদুল মালেক, শাহ নেসারুল হকসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির দুই দিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি এই আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার বিজয় দিবসের সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।
এরপর সকাল ৯টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন খালেদা জিয়া ও নেতৃবৃন্দ।