ওই এলাকায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান আঙ্গুরের এক সময়ের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত বাশারের বিরুদ্ধে আড়াইহাজারের আলোচিত চার খুনের মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও মামলাও থাকতে পারে বলে আড়াইহাজার থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থক চারজনকে ২০০২ সালে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় বর্তমানে যুক্তিতর্ক শুনানি চলছে নারায়ণগঞ্জের আদালতে। বাশার এই মামলার প্রধান আসামি বলে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কেএম ফজলুর রহমান জানিয়েছেন।
দলে বাশারের যোগদানে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগেরই অনেকে নেতা-কর্মী। তারা বলছেন, বাবু তার দলে শক্তি বাড়াতে বিতর্কিত এই ব্যক্তিকে ভিড়িয়েছেন। এই বিষয়ে বাবুর বক্তব্য, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী আওয়ামী লীগের ভোট বাড়াচ্ছেন তিনি।
সোমবার রাতে আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী বাজার মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে কয়েকশ’ কর্মী-সমর্থক নিয়ে আবুল বাশার আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি ফুলের তোড়া ও স্বর্ণের তৈরি নৌকা প্রতীক সম্বলিত কোট পিন পরিয়ে দেন বাবুকে। এসময় মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়, এই কোট পিনে তিন ভরি স্বর্ণ রয়েছে।
গোপালদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবু। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ্জালাল মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, গোপালদী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির মোল্লা প্রমুখ।
জাকির মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পৌর বিএনপির সভাপতি বাশারের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক, উপজেলা কমিটির সদস্য বদরুদ্দিন আহম্মেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আবুল কালামসহ মোট দুই হাজার নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ্জালাল মিয়া বলেন, বাশারের বিরুদ্ধে হত্যামামলা থাকার কথা তারাও জানেন।
“তার বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে, তা আইনগতভাবেই চলবে। দোষী হলে আদালতের রায়ে তার শাস্তি হবে,” বলেন তিনি।
সংসদ সদস্যের সোনার কোট পিন উপহার নেওয়ার বিষয়ে শাহজালাল বলেন, “একটি কোট পিনের ওজন আর কতটুকু হতে পারে।”
সোনার কোট পিনের বিষয়ে জাকির মোল্লা হেসে বলেন, “এটা তো আপনারা জানেন-ই।”
যোগদানের বিষয়ে তিনি বলেন, “আবুল বাশার কাশু সাবেক চেয়ারম্যান ছিল। সে দুই হাজার লোক নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। নেত্রীর (শেখ হাসিনা) নির্দেশ অনুযায়ী আওয়ামী লীগের ভোট বাড়াচ্ছি আমি।”
বাশারের আওয়ামী লীগে যোগদান নিয়ে দলের স্থানীয় অনেক নেতা অসন্তোষ জানিয়েছেন। কয়েকজন ওই অনুষ্ঠানে এজন্য যোগ দেননি বলেও জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সন্ত্রাসী আবুল বাশার কাশু চার খুন মামলা থেকে বাঁচতে এমপি বাবুকে ম্যানেজ করতেই আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে।”
এই অভিযোগের বিষয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতা শাহ্জালাল বলেন, “তার (বাশার) আওয়ামী লীগে যোগদান করার বিষয়টি আমরা ভালো চোখেই দেখছি।”
বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কারণ জানতে বাশারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও গোপালদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি বাশার ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তৎকালীন এমপি আঙ্গুরের ‘লোক’ হিসেবে নানা ধরনের অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানায়।
২০০২ সালের ১২ মার্চ বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ছোট ভাই বাবেক, ফুফাত ভাই বাদল, আওয়ামী লীগকর্মী ফারুক ও কবীরকে নির্যাতনের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল।
গোপালদী ইউনিয়ন বিএনপির তখনকার সভাপতি বাশারকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়।
আড়াইহাজার থানার ওসি আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাশার চার খুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।
মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ফজলুর রহমান বলেন, দুই নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির বিচার চলছে।
“সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে, এখন যুক্তিতর্ক চলছে,” বলেন রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।
গোপালদী পৌরসভার গত নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন বাশার।