বর্তমানে দেশে ‘একদলীয় গণতন্ত্র’ চলছে মন্তব্য করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অর্জন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ।
Published : 16 Oct 2014, 05:20 PM
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে দলের নতুন সহযোগী সংগঠন জাতীয় তাঁতী পার্টির এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “দেশে এখন গণতন্ত্র এসেছে। কিন্তু যে গণতন্ত্র দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারে না তা প্রকৃত গণতন্ত্র নয়, এক পার্টির গণতন্ত্র।”
দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে নিজের ইচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়েছিলেন দাবি করে এরশাদ বলেন, “আমাদের মাথায় শুধু একটাই চিন্তা-কী করে ক্ষমতায় থাকা যায়। কারণ আমরা জানি ক্ষমতা থেকে চলে গেলেই জেলে যেতে হবে, মামলার মুখোমুখি হতে হবে। একটার পর একটা মামলা দেয়া হবে। এই গণতন্ত্র প্রতিহিংসার গণতন্ত্র।
“গণতান্ত্রিক শাসনের স্বার্থে আমি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পর আমার বিরুদ্ধে ৪৩টি মামলা দেয়া হল। কিন্তু গত ২৫ বছরে মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হলো না। আমরা কি এই গণতন্ত্র চেয়েছিলাম?”
গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন এইচ এম এরশাদ। তার পর থেকে শুরু হয় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নবযাত্রা।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের পর পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ এবং দলীয় কার্যালয়ের সামনে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বিএনপি নেতৃত্বের প্রতি তীর্যক মন্তব্য ছোড়েন এরশাদ।
“একটি দলের নতুন কমিটি হল। কমিটি গঠনের পরপরই ওই দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বোমা বিস্ফোরণ হল। জাতীয় পার্টিতে এতো কমিটি গঠন করলাম, কই কোথাও কোনো বোমা বিস্ফোরণ কিংবা গোলাগুলি তো হয়নি,” বলেন তিনি।
রাজিব আহসানকে সভাপতি এবং আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে মঙ্গলবার সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের নতুন কমিটি অনুমোদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরদিন রাতে ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতাদের সঙ্গে খালেদার সাক্ষাতের পরপরই তার কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
নেতৃত্বের জন্য কোন্দলের কারণেই এই বিস্ফোরণ বলে মন্তব্য করেন এরশাদ।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা নিয়েও বিএনপির সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “আন্দোলনের কথা শুনি। দেওয়ানি মামলার মতো আন্দোলনের তারিখ পড়ে। তিন মাস পরে আন্দোলন হবে, ঈদের পরে আন্দোলন হবে। কবে আন্দোলন হবে?”
বিএনপিতে নেতৃত্বের ‘কোন্দল’ থাকলেও নিজের দল জাতীয় পার্টিতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি করেন এরশাদ।
“জাতীয় পার্টিতে কোনো কোন্দল নেই। কারণ এই পার্টির নেতৃত্ব আছে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদের হাতে,” বলেন তিনি।
নবগঠিত জাতীয় তাঁতী পার্টির কর্মী-সংগঠকদের উদ্দেশ্যে এরশাদ বলেন, “জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে তোমরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছ। আমরাই বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয়তাবাদী দল।
“আমরা বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাস করি। লতিফ সিদ্দিকীর কথা তোমরা সবাই জান- আমরাই প্রথম প্রতিবাদ করেছিলাম। একটি দল বলেছিল- তারা সরকারের পদক্ষেপ দেখে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা তা করিনি।”
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সাল চিশতী, এরশাদের রাজনৈতিক ও প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায় উপস্থিত ছিলেন।