দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা একটি ঘুষের মামলায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত সচিব (পিএস) মিয়া নুর উদ্দিন ওরফে অপুর জামিন আবেদন নাকচ করেছে ঢাকার একটি আদালত।
Published : 14 Jul 2014, 01:51 PM
ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় সোমবার শুনানি করে জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন।
শুনানির জন্য সকাল ১০টার দিকে হুইল চেয়ারে করে অপুকে আদালতে হাজির করা হয়। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল। আসামিপক্ষে ছিলেন তারেকুল ইসলাম ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার।
আদালতের নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে করা দুটি মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি অপু।
এর মধ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে রাজধানীর গুলশান থানায়। অপর মামলাটি হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের ছেলেকে সাব্বির হত্যা মামলা থেকে বাঁচাতে ঘুষ-লেনদেনের অভিযোগে, যেটি তদন্ত করেছে দুদক। দুই মামলাতেই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল।
বসুন্ধরার আইটি বিশেষজ্ঞ সাব্বির হত্যা মামলার আসামিদের বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০০৮ সালের ১৪ মে আদালত অভিযোগ গঠন করে।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে জানান, এ মামলায় মোট আসামি আট জন। অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বসুন্ধরার চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান শাহ আলম, তার দুই ছেলে সাফিয়াত সোবহান, সাদাত সোবহান, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, আবু সফিয়ান ও কাজী সলিমুল হক কামাল।
এদের মধ্যে তারেক, শাহ আলম ও তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। সুফিয়ান ও সলিমুল হক জামিনে আছেন। বাবর আছেন কারাগারে।
অভিযোগ গঠনের আদেশে বলা হয়, ২০০৬ সালের ৪ জুলাই সাব্বির খুন হওয়ার পর আসামি সাফিয়াত সোবহান লন্ডনে পালিয়ে যান এবং তার বাবা আকবর সোবহান ছেলেকে বাঁচাতে নানামুখী তদবির শুরু করেন। এ কারণে মামলার তদন্তে স্থবিরতা দেখা দেয়।
এরপর তখনকার প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর আসামিকে বাঁচানোর জন্য ৫০ কোটি টাকা ঘুষের রফা করে নিজে ৫ কোটি এবং সলিমুল হক কামালের সহায়তায় আরো ১৫ কোটি টাকাসহ ২০ কোটি টাকা ঘুষ নেন। আরেক আসামি তারেক রহমান ১ কোটি টাকা ঘুষ নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অপু বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিতর্কিত ‘হাওয়া ভবনের’ অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন বলে গণমাধ্যমের খবর। ২০০৭ সালে ক্ষমতার পালাবদলের সময় তিনি মালয়েশিয়া চলে যান।
কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, গত ১২ জুন তারেক রহমানের মালয়েশিয়া সফরের সময় অপুই তাকে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান। ১৩ জুন তারেক রহমান মালয়েশিয়া থেকে ফিরে যান লন্ডনে এবং ১৭ জুন ঢাকায় আসেন অপু।
পরদিন ১৮ জুন অপু ঢাকার মহানগর ২ নম্বর দ্রুত বিচার আদালতে আত্মসমর্পণ করলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে জেলহাজতে পাঠান ওই আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আতাউল হক।
১৯ জুন দুদকের এ মামলায় অপুকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন হলে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। আদালত গ্রেপ্তারের আবেদন মঞ্জুর করে জামিন শুনানির জন্য ২৬ জুন দিন রাখে।
২৬ জুন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জামিন বিষয়ে শুনানির জন্য প্রস্তুত নন উল্লেখ করে সময়ের আবেদন করলে আদালত পরবর্তী তারিখ রাখেন ১৪ জুলাই ।
সোমবার জামিন শুনানিতে অপুর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, অপু আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়েছেন। তিনি অসুস্থ, নিজে হাঁটাচলা করতে পারেন না। এ কারণে তাকে হুইল চেয়ারে করে আদালতে আনা হয়েছে।
অপুর অপর আইনজীবী তরিকুল ইসলাম বলেন, “ঘুষের বিষয়টি কে দিয়েছে, কে দেখেছে তাও এজহারে উল্লেখ নেই। এ মামলা চলতে পারে না।”
জামিনের বিরোধিতা করে কাজল বলেন, “এ মামলাটি ২১ কোটি টাকা ঘুষের মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বাবর সাহেব তখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তি সোবহান সাহেবের দুই ছেলে হত্যা মামলার আসামি। ছেলেদের বাঁচাতে তিনি বাবর সাহেবের কাছে যান। বাবর সাহেবসহ মামলার আট আসামি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। আজকের আসামি অপু সবর্শেষ এক কোটি টাকা বাবর সাহেবকে দিয়েছিলেন।”
এদিকে অপু কীভাবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও মিডিয়ার চোখ ফাঁকি দিয়ে একেবারে আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করলেন সে বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা।
ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক আবু সাঈদ সাগর বলেন, “অপুকে বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার করা উচিৎ ছিল। এটা না করার নিশ্চয়ই গোপন কোনো কারণ রয়েছে।”
প্রায় এক মাস আগে অপু গোপনে দেশে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চেপে রাখা হয় বলে অভিযোগ করেন এই আইনজীবী।