বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, আগামী ২২ এপ্রিল তিস্তা অভিমুখে নেতাকর্মীদের নিয়ে এই লংমার্চ শুরু করা হবে। ২৩ এপ্রিল নীলফামারীর ডালিয়ায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এবার সেচের অভাবে বোরো ধান উৎপাদন হবে কি না তা নিয়ে ওই অঞ্চলের মানুষজন চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন।”
তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা, এ বিষয়ে জনমত গঠন, ভারতীয় জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে বিএনপি এই কর্মসূচি পালন করবে বলে জানান তিনি।
কর্মসূচি পালনে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে বিএনপির মুখপাত্র ফখরুল বলেন, “আমরা আশা করব, সরকার এই লংমার্চে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে। অতীতের মতো চিরাচরিতভাবে এই কর্মসূচিতে কোনো বাধা দেবে না। কারণ এই কর্মসূচির ফলে ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে সরকারের দর কষাকষি করতে সহজ হবে।”
মির্জা ফখরুল জানান, ২২ এপ্রিল সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে লং মার্চ শুরু করার পর বিকালে রংপুর শহরে সমাবেশ হবে। রাতে যাত্রা বিরতি শেষে পরদিন সকালে তিস্তা নদী অভিমুখে লংমার্চ শুরু হবে।
নীলফামারীর ডালিয়ায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি টানা হবে।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথ সভা শেষে এই সংবাদ ব্রিফিং হয়। যৌথ সভায় তিস্তা অভিমুখে লংমার্চের প্রস্তুতি সংক্রান্ত নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পে সেচের পানি সরবরাহ কমে গেছে। এই প্রকল্পের আওতায় সাড়ে সাত লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার কথা থাকলেও পানির অভাবে মাত্র সাড়ে ৫ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, “ভারত নিজেদের দেশে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন করে বিহারে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
“আমরা মনে করি, তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এই পানির ন্যায্য হিস্যা পাবার বিষয়টি কোনো দয়া-দাক্ষিণ্যের বিষয় নয়। এটা আমাদের আইনগত অধিকার।”
ভারতের লোকসভা নির্বাচন চলাকালে এ ধরনের কর্মসূচি পালনে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে অনেকের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক অবশ্যই আমরা চাই। কিন্তু সেজন্য আমাদের দেশের তিন কোটি মানুষকে বিপদে ফেলে দিতে পারি না। এটা একটি জাতীয় সমস্যা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জানান, নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে আগামী ১৭ এপ্রিল রাজধানীতে প্রতিবাদ সভা হবে।
২০১১ সালে বনানীতে নিজ বাসার কাছ থেকে গাড়ি চালকসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। এরপর থেকে তারা আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ শাহজাহান, রুহুল কবির রিজভী, গোলাম আকবর খন্দকার, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাখাওয়াত হাসান জীবন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহযোগী সংগঠনের আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আ ন হ আখতার হোসেন, নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, এম এ মালেক, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, হাফেজ আবদুল মালেক, হুমায়ুন ইসলাম খান, তকদির হোসেন জসিম, বজলুল করীম চৌধুরী আবেদন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।