জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও করবে বিএনপি

উপজেলা নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা, ভোট কেন্দ্র দখল, জালিয়াতি, গুম ও গুপ্তহত্যার অভিযোগ এনে সারা দেশে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2014, 06:48 AM
Updated : 18 March 2014, 10:34 AM

বৃহস্পতিবার সারা দেশে এই ঘেরাও কর্মসূচিতে জেলা প্রশাসকদের স্মারকলিপি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। 

মঙ্গলবার রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। 

রিজভী বলেন, “গত তিন দফা ভোটে সহিংসতা, হত্যা, জখম, ভোট কেন্দ্র দখল, ভোট জালিয়াতি, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ও সমর্থকদের মারধর, উপজেলা চেয়ারম্যান পদ ক্ষমতাসীনদের অনুকূলে নিতে রক্তাক্ত দাঙ্গা হাঙ্গামা এবং সারাদেশে খুন, গুম ও গুপ্তহত্যার প্রতিবাদ আমরা ২০ মার্চ এই কর্মসূচি পালন করব।”

এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনের তিনটি পর্বে বিএনপি ও শরিক দলের সমর্থিত প্রার্থীরা ক্ষমতাসীনদের তুলনায় সামান্য এগিয়ে আছেন।

তিন পর্ব মিলিয়ে বিএনপির চেয়ারম্যানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৬ জন। আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা চেয়ারম্যান হয়েছেন ১২১ উপজেলায়।

প্রতি দফার নির্বাচনেই ধারাবাহিকভাবে সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। প্রতিবারই ভোটের আগে বিএনপি ভোট জালিয়াতির ষড়যন্ত্র ও দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে। আর ভোটের পর তারা এনেছে ব্যাপক অনিয়ম, কেন্দ্র দখল ও সহিংসতার অভিযোগ। 

অবশ্য নির্বাচন কমিশন বলছে, দলীয় দ্বন্দ্বে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ‘অনভিপ্রেত’ ঘটনা ঘটলেও তিন দফায় মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে রিজভী বলেন, “উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করতে সহিংসতার মাত্রা বাড়িয়েছে এই অবৈধ সরকার। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সমর্থনে এসব ঘটনা ঘটেছে, যা গণমাধ্যমের সংবাদে প্রকাশ পেয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী-কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে। কুপিয়ে বা পিটিয়ে জখম করা হয়েছে শত শত নেতা-কর্মীকে।

“উপজেলা নির্বাচনে এই সহিসংতার একমাত্র লক্ষ্য- দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে দেয়া।”

বার বার অভিযোগ জানানোর পরও নির্বাচন কমিশন ‘নির্বিকার ও নির্লিপ্ত’ ভূমিকা পালন করে সরকারের ‘রাবার স্ট্যাম্প প্রতিষ্ঠানে’ পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।

তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনকে ঘিরে ফেনীর দাগনভুঁইয়া, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, খুলনার ফুলতলা, তেরখাদা, রূপসা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ভোলার মহনপুর, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও তাণ্ডব সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রতিদিন ‘নিরুদ্দেশ’ হয়ে যাচ্ছে নেতা-কর্মীরা।

“আজ দেশের অধিকাংশ সংবাদপত্রে এসেছে- ২৪ ঘন্টায় দেশের পৃথক পৃথক স্থানে অন্তত ১৩ জনের লাশ পাওয়া গেছে। এসব লাশ কখনো অজ্ঞাত কখনো পরিচিত। দেশের বিভিন্ন স্থানে  নদীতে, পুকুরে, খালে-বিলে এমনকি গভীর রাতে শুনশানের লোকালয়েও লাশ পাওয়া যাচ্ছে।”

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকেই রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, ছাত্রসহ নানা পেশার মানুষ ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বলি’ হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা। 

তিনি বলেন, জনগণের আন্দোলনের ‘ভয়েই’ সরকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালামসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করছে, ‘মিথ্যা’ মামলা দিচ্ছে।

“সরকার জেল-জুলুম দিয়ে আন্দোলনকে স্তব্ধ করার উদ্ভট অপকৌশল নিয়েছে। এতে কোনো কাজ হবে না। বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে দেশবাসী এখন প্রস্তুত। জনগণের দুঃসাহসী আন্দোলন এখন চূড়ান্ত গন্তব্যের দিকে ধাবমান।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহিন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।