মওদুদ আহমদের সঙ্গে পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বাদানুবাদের পর এক দফা ওয়াক আউট করে সংসদ অধিবেশনে ফিরলেও পয়েন্ট অফ অর্ডারে কথা বলতে না পারার অভিযোগ তুলে বুধবার দ্বিতীয় বার ওয়াক আউট করেছে বিরোধী দল।
Published : 05 Jun 2013, 02:05 PM
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বের পর মওদুদের নেতৃত্বে অধিবেশনে যোগ দেন বিরোধী সদস্যরা।
৩৫ মিনিট পর প্রশ্নোত্তর পর্বে পাটমন্ত্রীর এক বক্তব্যের প্রতিবাদে তারা ওয়াক আউট করলেও মাগরিবের নামাজের বিরতির পর পুনরায় অধিবেশন কক্ষে ফেরেন তারা।
এর ঘণ্টাখানেক পর বিরোধী দলের সৈয়দা আশিফা আশরাফী পয়েন্ট অফ অর্ডারে কথা বলতে চাইলেও বিধি অনুযায়ী তা না হওয়ায় তাকে সুযোগ দেননি স্পিকার। তখন পুনরায় ওয়াক আউট করে বিরোধী দলের সদস্যরা।
টানা ৮৩ দিন অনুপস্থিত থেকে সোমবার বাজেট অধিবেশনে যোগ দেয়ার পর এটা বিরোধী দলের দ্বিতীয়বার ওয়াক আউট।
সোমবার এক দফা ওয়াক আউটের পর মঙ্গলবার অধিবেশনের পুরো সময় ছিলেন বিরোধী সদস্যরা।
বিকাল সোয়া ৫টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে অধিবেশনের শুরুতেই ছিলো প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব। এতে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বের পর সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে অধিবেশন কক্ষে ঢোকেন বিরোধী দলের সদস্যরা।
এরপর প্রশ্নোত্তর পর্বে পাটমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে উত্তাপ ছড়ায় সংসদে।
পাট শিল্পের সুদিন ফেরানো নিয়ে সরকারের উদ্যোগ জানতে চেয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্য ইমাজউদ্দিন প্রামানিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে দাঁড়িয়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “এর উত্তর দিতে গেলে ভাসুরের লজ্জা হতে পারে।”
পাটশিল্প ধ্বংসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন থেকে শুরু করে পরবর্তী সরকারগুলোর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন তিনি।
মন্ত্রীর বক্তব্যের সময় সংসদ নেতা শেখ হাসিনাকে টেবিল চাপড়ে তা সমর্থন করতে দেখা যায়।
স্পিকার তাদের বসার অনুরোধ করে বিরোধী দলের সদস্যদের একজনকে সম্পূরক প্রশ্ন করার সুযোগ দেন।
এক পর্যায়ে মওদুদ আহমদ দাঁড়ালে তাকে সম্পূরক প্রশ্ন করার অনুরোধ জানান স্পিকার।
মওদুদ বলেন, “আমি সম্পূরক প্রশ্ন করব না। পাটমন্ত্রী প্রসঙ্গ ছেড়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলছেন। প্রশ্নোত্তরে এ ধরনের বক্তব্য ব্যাড প্র্যাকটিস।”
এরপর স্পিকার সম্পূরক প্রশ্নের জন্য সরকারি দলের কাজী কেরামত আলীকে সুযোগ দেন।
তার প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে লতিফ সিদ্দিকী বিএনপি নেতা মওদুদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “দেশে সামরিক শাসন না এলে আপনি এ সংসদেও আসতে পারতেন না। আপনি নিজের গৌরবে সংসদে আসেননি। আপনার নেতার ছেড়ে দেয়া আসনে সংসদে এসেছেন।”
এর প্রতিক্রিয়ায় মওদুদসহ বিরোধী দলের সদস্যরা পুনরায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানালে স্পিকার মন্ত্রীকে প্রশ্নের উত্তরে অপ্রাসঙ্গিক কথা না বলার অনুরোধ জানান।
মওদুদ তখন মাইক ছাড়াই বলতে থাকেন, মন্ত্রীর বক্তব্য একপাঞ্জ করতে হবে। তখন পাটমন্ত্রী তার সম্পূরক প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলে এরই মধ্যে বিরোধী দলের সদস্যরা ওয়াক আউট করেন।
পৌনে ৭টার দিকে বিরোধী দলের সদস্যরা অধিবেশন কক্ষ ছাড়ার পরপরই স্পিকার মাগরিবের নামাজের বিরতি দেন।
বিরতির পর অধিবেশন শুরু হলে বিরোধী দলের সদস্যরাও ফেরেন।
রাত পৌনে ৯টায় আশিফা আশরাফী কথা বলতে চাইলে স্পিকার বলেন, কী বিষয়ে পয়েন্ট অফ অর্ডার চান, তা ফর্মুলেট করেন।
আশিফা একবার বলেন, তিনি ৩০১ বিধিতে কথা বলতে চান; পরে আবার বলেন, ৩৮ বিধিতে কথা বলতে চান তিনি।
এসময় সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ফজলে রাব্বি মিয়া দাঁড়িয়ে স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, মন্ত্রীর বিবৃতির পর আর পয়েন্ট অব অর্ডার হয় না।
কিন্তু বিরোধী দলের সদস্যরা দাবি করেন, পয়েন্ট অব অর্ডারের সুযোগ রয়েছে।
স্পিকার দুই পক্ষের কথা শুনে কার্যপ্রণালী বিধি দেখে বিরোধী দলের সদস্যদের বসতে অনুরোধ জানিয়ে পয়েন্ট অফ অর্ডারের বিধি নিশ্চিত করতে তাদের তাগিদ দেন।
তখন আসিফা আশরাফী বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে ধরে কথা বলা শুরু করেন।
এতে স্পিকার বলেন, “এটা পয়েন্ট অব অর্ডার নয়। কার্যপ্রণালীবিধি পড়ে দেখেন। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে নোটিস দেন।”
তিনি আসিফা আশরাফীর মাইক বন্ধ করে দিনের কার্যসূচিতে গেলে বিরোধী দলীয় সদস্যরা হৈ চৈ করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে আসন ছাড়েন মওদুদ। তাকে অনুসরণ করে বিরোধী অন্য সদস্যরাও অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
এর কিছুক্ষণ পর দিনের কার্যসূচি শেষ করে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত সংসদের অধিবেশন মুলতবি করেন স্পিকার। ওই দিন ২০১৩-২-১৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
মওদুদের পয়েন্ট অব অর্ডার
প্রথমবার ওয়াক আউটের পর ফিরে পয়েন্ট অব অর্ডারে মওদুদ আহমেদ নারায়ণগঞ্জে টার্মিনাল নির্মাণে ভারতীয় একটি সংস্থার আগাম জরিপ নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, এতে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে না।
“প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশে যা কিছু করে, তাতে যেন সরকারের কিছুই করার নেই।”
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াকে নিয়ে পাটমন্ত্রীর বক্তব্যের কথা তুলে ধরে মওদুদ বলেন, সংসদে কাউকে কটাক্ষ কোনোভাবে কাম্য নয়।
মওদুদের বক্তব্যের পরপরই সরকারি দলের তোফায়েল আহমদ পয়েন্ট অফ অর্ডারে কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভারতীয় একটি বেসরকারি সংস্থা স্টাডি করার জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমতি চেয়েছে। শুধু কন্টেইনার টার্মিনাল করার জন্য স্টাডির অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে বিরোধী দলের সমালোচনা করে তোফায়েল বলেন, “চীন যদি চট্টগ্রামে এসে স্টাডি করে, তা হলে ঠিক আছে। ভারতের নাম আসলেই কথা।
“বিরোধীদলীয় নেতা ভারতে গেলেন, রেড কার্পেট রিসিপশন পেলেন, খুব ভালো। আবার ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করলেন না। আপনাদের পলিসি তো ঠিক করা উচিত।”
সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার অনুপস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে তোফায়েল বলেন, “মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতা এলেন, এসে দেখলেন, চলে গেলেন। আশা করবো, আপনারা আমাদের কথা শুনবেন।”
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর ছিলো, আপনারা এলেন না। উনার প্রশ্নোত্তর শেষ হলো, আপনারা এলেন। আপনারা এলে তো প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে পারতেন।”