তত্ত্বাবধায়কে ফেরা কোনোভাবেই নয়: শেখ হাসিনা

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2013, 09:18 AM
Updated : 16 May 2013, 12:10 PM

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের বিরোধী দলের দাবি এবং তা নিয়ে সংলাপের আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার ১৪ দলের এক বৈঠকে নিজের অবস্থান জানালেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

তিনি বলেছেন, “আমরা ২০০৭-২০০৮ সালের মতো পরিস্থিতিতে কোনোমতেই ফিরে যেতে চাই না। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।”

আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিএনপি। তবে তা নাকচ করে সরকারের বক্তব্যে সামনে রাজনৈতিক সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন অনেকে।

এর মধ্যেই এই মাসের শুরুতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে সংলাপের প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারেও আওয়ামী লীগের আপত্তি নেই বলে জানান তিনি।

ওই প্রস্তাবের পর দাবি মেনে নিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের দেয়া আলটিমেটামের প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা ১৪ দলের সভায় বলেন, “আমরা আলটিমেটাম দেখি। এটা কি ২০০৭-০৮ সালের সরকারকে ফিরিয়ে আনার চক্রান্ত?”

সেনা নিয়ন্ত্রিত ওই সরকারের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “আমরা দেখলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তাণ্ডব। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গ্রেপ্তার, বাজার ঘাট ধ্বংস, ব্যবসায়ীদের ধরে ধরে নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের নানা ধরনের ঘটনা।

“যেহেতু আর্মি ব্যাক তত্ত্বাবধায়ক ছিলো, সেজন্য চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে কীভাবে থেকে যাওয়া যায়, তার চক্রান্ত হয়।”

ওই সরকারের সময় দেশের সার্বিক অর্থনীতির অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সেই সঙ্কট কাটিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মহাজোট।

এই প্রসঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করা এবং স্বাধীনতার পর বর্তমানে সরকারের সময়েই ‘গোল্ড রিজার্ভ’ বৃদ্ধি করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

এর ধারাবাহিকতা রাখতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনরায় ফিরিয়ে না আনার পক্ষপাতি প্রধানমন্ত্রী।

গণভবনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়েও কথা বলেন তিনি।

“যুদ্ধাপরাধের বিচার আমরা ইনশাল্লাহ করবোই, বাস্তবায়নও করতে পারবো।”

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারকে উৎখাত করে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করতে চাইছে বিরোধী দল।

সভায় বক্তব্যের শুরুতেই ঘূর্ণিঝড় মহাসেনে বেশি ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় নিজের স্বস্তির কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

“অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলাম,” ঝড়টি দুর্বল হয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রমের কয়েক ঘণ্টা পর অনুষ্ঠিত এ সভায় বলেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে তেমন ক্ষয়ক্ষতি যেন না হয়, সেজন্য সরকারের প্রস্তুতি যথেষ্ট ছিলো।

ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ায় শুক্রবার জুমার পর প্রত্যেক মসজিদে দোয়া এবং একদিন মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনার আহ্বানও জানান তিনি।

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম।

শরিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, ফজলে হোসেন বাদশাহ, জাসদের হাসানুল হক ইনু, মঈনুদ্দীন খান বাদল, শিরীন আখতার, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, গণতন্ত্রী পার্টির নুরুর রহমান সেলিম, ন্যাপের এনামুল হক, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের অসিত বরণ রায়, গণতন্ত্রী পার্টির জাকির হোসেন, গণআজাদী লীগের আব্দুস সামাদ প্রমুখ।

সভায় শেখ হাসিনার প্রারম্ভিক বক্তৃতার পর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন ১৪ দলের নেতারা।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আর না ফেরানোর পক্ষে ১৪ দল অবস্থান প্রকাশ করেছে।

“চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত ১৪ দল এক সঙ্গে কাজ করে যাবে,” বলেন তিনি। এক্ষেত্রে ‘চূড়ান্ত বিজয়’ বলতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকেই বুঝিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য।

হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের মতিঝিল থেকে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপও সমর্থন করেছে ১৪ দল।

মতিঝিল অভিযানে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অপপ্রচার চলছে বলেও অভিযোগ করেন ১৪ দলের নেতারা।

নাসিম বলেন, “বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ষড়যন্ত্র করেছিলো। শেখ হাসিনা সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়ে হেফাজতকে সেখান থেকে তুলে দিয়েছেন।”

শেখ হাসিনা তার প্রারম্ভিক বক্তব্যে শেখ হাসিনা হেফাজতের এই কর্মসূচি নিয়ে রসিকতাচ্ছলে বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সাথে আমরা মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ কাটাতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে বলা হয়েছিলো, আমরা পালানোর পথ পাবো না। আমাদের তাড়াতে দু’শ’ গরুর ব্যবস্থা করা হয়েছিলো।”

সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জবাব দিতে দেশব্যাপী গণসংযোগ শুরু করছে ১৪ দল।

প্রতিটি এলাকায় সরকারের পাশাপাশি ১৪ দল মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে ‘গণপ্রতিরোধ কমিটি’ গড়ে তুলবে বলে নাসিম জানান।

তিনি আরো বলেন, আসন্ন চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ১৪ দলের পক্ষ থেকেও সমর্থন দেয়া হয়েছে।

তারা হলেন- খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক, বরিশালে শওকত হোসেন হিরণ, রাজশাহীতে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সিলেটে বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান।

এই চার মেয়র আগামী জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।