শুক্রবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, “গত কয়েক দিনের ভয়াবহ সংঘাতে যারা জীবন দিয়েছে, আমি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। এই সব নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সুবিচারের দাবিতে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করছি।”
হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নি সংযোগ ও ধর্মান্তরিত করার আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদী ওরফে দেইল্লা রাজাকারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
রায়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে পুলিশ রয়েছেন চারজন, দুইজন সরকার সমর্থক সংগঠনের কর্মী। চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বাকিদের প্রায় সবাইকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে জামায়াত।
সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে এরই মাঝে রবি ও সোমবার সারাদেশে টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতাল দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াও মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা সারা দেশে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
পাশাপাশি ধর্ম কিংবা স্বাধীনতার ওপর আঘাত সহ্য করা হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন সরকারকে।
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “ইসলাম এবং স্বাধীনতায় কোনো বিরোধ নেই। অথচ একটি কুচক্রি মহল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে পবিত্র ইসলাম, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে নোংরা কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়েছে।”
গত ২২ ফেব্রুয়ারি জুমার নামাজের পর কয়েকটি ইসলামী দলের ব্যানারে শাহবাগের জাগরণমঞ্চবিরোধী মিছিল থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। তাণ্ডব থেকে বাদ পড়েনি শহীদ মিনার, জাতীয় পতাকাও।
সে সময় পুলিশ বলেছিল, জামায়াত-শিবিরের ইন্ধনেই এসব ঘটনা ঘটে।
অবশ্য খালেদা জিয়া বলছেন, ধর্মপ্রাণ মানুষের উপর সরকার নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে।
তার ভাষায়, “এইসব ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসর হিসাবে চিহ্নিত করে সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মসজিদে ঢুকে মারধর করা হয়েছে।”
যুদ্ধাপরাধের দায়ে এ পর্যন্ত আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, যার তিনটি রায়ে দুই জনের ফাঁসি এবং এক জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
রায় নিয়ে এর আগ কোনো বক্তব্য না দিলেও সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচারক নিয়োগসহ সবকিছু সরকার করেছে। রায়ের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভে সরকার একাত্মতা ঘোষণা করেছে। তাই এই ট্রাইব্যুনালের যে কোনো রায়ই এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।