ধর্মভিত্তিক সব দল নিষিদ্ধের পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের নেই বলে জানিয়েছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
Published : 24 Feb 2013, 11:03 AM
তিনি রোববার সংসদে বলেছেন, “আমরা জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। যারা বাংলাদেশকে এখনো মানে না, ৩০ লাখ শহীদের বিশ্বাস করে না, তাদের নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে; তাদের নিষিদ্ধ করা হবে।”
“অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করব না,” বলেন শেখ সেলিম।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের আন্দোলন থেকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধের জোরালো দাবি ওঠে।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতকে নিষিদ্ধের পক্ষে মত দেন।
তবে কী প্রক্রিয়ায় জামায়াত নিষিদ্ধ করা হবে, সেই বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।
স্পিকার আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে রোববার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় শেখ সেলিম শুধু জামায়াতকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনার কথা জানান; যদিও ধর্মভিত্তিক সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে বামপন্থী দলগুলো।
জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “দলটি ইসলাম ধর্ম ব্যবহার করে দেশজুড়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে।”
ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে হত্যার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে শেখ সেলিম বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।
মিথ্যা তথ্য রাজীবের ব্লগে দিয়ে তা নিয়ে আমার দেশ ও নয়া দিগন্ত সংবাদ প্রকাশ করছে দাবি করে এই পত্রিকা দুটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
সেলিম বলেন, “১৫ ফেব্রুয়ারির আগে রাজীবের ব্লগে ধর্মবিদ্বেষী কিছু ছিল না। রাজীবকে হত্যার পর জামায়াত-শিবির তার ব্লগে ঢুকে অপপ্রচার চালিয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত এনে দেশবাসীকে উস্কানি দিয়েছে। রামুর ঘটনায়ও তারা একই কাণ্ড করেছে।”
জামায়াতের প্রতি সমর্থন দিয়ে বিএনপি ইসলাম ও মহানবী (স.) কে অবমাননা করেছে বলে মন্তব্য করেন সেলিম।
‘বিএনপি ও জামায়াত একই সূত্রে গাঁথা। জামায়াতের কর্মকাণ্ডের সব সমর্থন দিচ্ছে তারা। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।”
অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের এখনি উপযুক্ত সময়।
“জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলেও যা, না করলেও তা। এখনি বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে দেশকে অরাজক অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হবে।”
জামায়াত-শিবির অপপ্রচার করে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
তোফায়েল বলেন, “এই জামায়াত ফতোয়া দিয়েছিল- ‘যুদ্ধের সময় হত্যা, নারী ধর্ষণ করা জায়েজ’।
“যারা ধর্মকে পুজি করে রাজপথে নেমেছে, ধর্মপ্রাণ মুসলিমকে বিভ্রান্ত করতে চায়, তাদের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।”
জামায়াত নিষিদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তোফায়েল।
এই আলোচনার সূত্রপাত করে সুবিদ আলী ভুইয়া বলেন, “ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই ধর্মকে ব্যবহার করে একটি চক্র মরিয়া হয়ে উঠেছে।”
“শুক্রবারের তাণ্ডব দেখেছেন। এরা কারা? যারা ইসলামের নামে দেশের পতাকা ছিড়ে ফেলে, শহীদ মিনার ভেঙে ফেলে, মসজিদের জায়নামাজ পুড়িয়ে ফেলে-এভাবে কী ইসলাম রক্ষা করতে পারে।“
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিম বলেন, “দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চলছে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সরকারের দায়িত্বও আছে, তেমনি রয়েছে ক্ষমতা।”
“ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে আগুন নিয়ে খেলছে। এ অবস্থা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে দমন করতে হবে। যে অপশক্তি মাথা চড়া দিয়ে উঠেছে, তাকে এখনই কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।“
সব রাজনৈতিক দলের আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার আহ্বান জানান আজিম।